আর একদিন পরেই স্বাধীনতা দিবস। পাড়ায়-মহল্লায় বাজবে স্বাধীনতার গান, দেশাত্মবোধক গান, জাগরণমূলক গান। অনেক গানের মধ্যে বাজবে শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া গানগুলোও। যে গানগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, উৎসাহ যুগিয়েছে। অথচ এবার থাকবেন না ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’-এর কিংবদন্তি এই শিল্পী!
‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘ ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানগুলো ছাড়া যে কোনো দিবস অপূর্ণ রয়ে যায়।
আবার ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘ওই ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘তুমি সাত সাগরের ওপার হতে আমায় ডেকেছো’ এমন আরও অনেক গান ছাড়া ভালোবাসা পানসে লাগে।
বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পেয়েছে। গানগুলো খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ আর ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’।
শাহনাজ রহমতউল্লাহ তার ক্যারিয়ার শেষ করার ঘোষণা দেন পেশাগত জীবনের ৫০তম বছরে। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রায় সব গানই হিট।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ওই ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়’, ‘আমি সাত সাগরের ওপার হতে’, ‘কে যেন সোনার কাঠি ছোঁয়ায় প্রাণে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’, ‘তুমি কি সেই তুমি’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি’, ‘স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই’, ‘বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না’, ‘যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি’, ‘শোনেন শোনেন জাহাঁপনা’, ‘আমি যে কেবল বলে তুমি’, ‘একটু সময় দিলে না হয়’, ‘আবার কখন কবে দেখা হবে’, ‘তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে’, ‘এই জীবনের মঞ্চে মোরা’, ‘বারোটি বছর পরে’, ‘আরও কিছু দাও না দুঃখ আমায়’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি দিয়ে চোখ বাঁধা যায়’, ‘ও যার চোখ নাই’, ‘ঘুম ঘুম ঘুম চোখে’, ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছ’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ এলে নেই তো সংশয়’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’, ‘আমায় তুমি ডাক দিলে কে’, ‘ওই আকাশ ঘিরে সন্ধ্যা নামে’, ‘আমি ওই মনে মন দিয়েছি যখন’, ‘আমার সাজানো বাগানের আঙিনায়’, ‘দিগন্ত-জোড়া মাঠ’, ‘তোমার আলোর বৃন্তে’।
৬৭ বছর বয়সে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টায় মারা যান শাহনাজ রহমতউল্লাহ। তার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বাদ যোহর বারিধারা মসজিদে জানাজা শেষে শাহনাজ রহমতউল্লাহকে দাফন করা হয় বনানী আর্মি গোরস্থানে।