রোমান্টিক নাকি অ্যাকশন? সিনেমা দেখতে বসার আগেই অনেকে প্রশ্ন করে নেন? কারো কারো পছন্দের তালিকায় অ্যাকশন বা কমেডি সিনেমার প্রাধান্য থাকলেও সিনেমার রোমান্স ছুঁয়ে যায়নি এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার।
রোমান্টিক সিনেমা বলতে প্রথমেই মনে আসে হলিউডের ‘টাইটানিক’ আর বলিউডের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার নাম। তাই বলে কি ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’ গানটির রোমান্টিকতা কোনো অংশে কম?
হলিউডে যেমন কিছু মন ছুঁয়ে যাওয়া রোমান্টিক দৃশ্য রয়েছে তেমনই রয়েছে বলিউডে ও ঢালিউডেও। জেনে নিন বিশ্বসেরা ১০টি রোমান্টিক দৃশ্য কি কি।
টাইটানিক:
প্রেম বলতেই সবার মনের কোণে ভাসে ‘টাইটানিকে’র কথা। সিনেমাতে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেটের করা প্রেমের দৃশ্য মন কাড়ে সবার।
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রোজকে জাহাজের ডেকে নিয়ে পাখির মতো উড়তে শেখায় দরিদ্র পরিবারের ছেলে জ্যাক। জেমস ক্যামেরনের তৈরি ছবিটির সেই দৃশ্য আজও চিরনতুন সবার মনে। আজও অনেক প্রেমিক যুগল নিজেদের রোজ আর জ্যাকের জায়গায় কল্পনা করে চলে।
টোয়াইলাইট:
মানুষের রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের সাথে এক নিষ্পাপ মানবীর প্রেম। এই নিয়েই গড়ে উঠেছে টোয়াইলাইট সিরিজের সিনেমাগুলো। স্টেফানি মেয়ারের লেখা বই থেকে তৈরি এই সিনেমাগুলোতে বেলা ও অ্যাডওয়ার্ডের অমর প্রেম নতুন মানে তৈরি করে প্রেমের। তবে সিনেমার সবচেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য ধরা হয় প্রথম সিনেমা টোয়াইলাইটের একটি অংশকে। সেখানে বেলাকে প্রেম নিবেদন করার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায় এডওয়ার্ড। প্রেম নিবেদনের এই অংশটিই সিনেমার সবচেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য।
দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে:
সিনেমায় ট্রেনের সিন বলতেই মনে আসে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার কথা। আর হিন্দি সিনেমায় প্রেমের কথা বলতেই আসে রাজ আর সিমরেনের কথা। রাজের রোমান্স দেখে অনেক তরুণীই মনে মনে স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে রাজের প্রতীক্ষা করে। রাজ আর সিমরেনের ট্রেনের মধ্যেকার দুষ্টু-মিষ্টি রোমান্স আর যাই হোক কেউ মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না কখনোই। আর সিনেমার শেষে রাজের জন্য ট্রেনের দিকে সিমরেনের দৌঁড়ে যাওয়ার সিনটাও সবাইকে ছুঁয়েছে।
হাম আপকে হ্যায় কৌন:
রোমান্টিক ফ্যামিলি ড্রামার অনবদ্য উদাহরণ এই সিনেমাটি। সালমান খানের সদ্য তারুণ্যে পা রাখা চেহারা এবং মাধুরীর মিষ্টি হাসি মিলে এক অসাধারণ যুগলবন্দী। মাধুরীর সেই ‘উহু উহু’ কাশির জন্য যেন এখনও অপেক্ষা করে থাকে হাজারো পুরুষ। পুরো সিনেমাটিই পূর্ণমাত্রার রোমান্টিক হলেও ‘পেহেলা পেহেলা পেয়ার হ্যায়’ গানটির আগে সালমান ও মাধুরীর মৃদু রোমান্স এবং তারপরে পুরো গানটির চিত্রায়ন ছুঁয়ে যায় সবার মন।
ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু:
ঋত্বিকের সাথে কারিনার প্রেম দিওয়ানা করেছে এই সিনেমার সকল দর্শককে। ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু’ সিনেমায় ঋত্বিক ও কারিনার প্রেম যেমন সবাইকে হাসিয়েছে, তেমন বাস্তবতার জন্য তাদের বিচ্ছেদ সবাইকে কাঁদিয়েছেও। ভ্যালেন্টাইনের রাতে ঋত্বিক-কারিনার ডেটিং ছিলো এই সিনেমার সবচেয়ে রোমান্টিক সিনগুলোর একটি।
দিল তো পাগল হ্যায়:
দু:খও কখনো কখনো রোমান্স ছড়িয়ে দিতে পারে। কখনোই নিজের জন্য মি.রাইটের দেখা না পাওয়া মাধুরী যখন সিনেমার শেষে এসে ‘আমাকে কোনো এক মুহূর্তের জন্য কি ভালোবেসেছো?’ শাহরুখ খানের এমন প্রশ্নে চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ‘না, কখনো না’ বলা, এবং সেই না’ এর মধ্যে দিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ আজও একই রকম রোমান্টিক আবহ তৈরি করে দর্শকের মনে।
কেয়ামত থেকে কেয়ামত:
সালমান শাহ বাংলা সিনেমার এমন একজন নায়ক যিনি মরে গিয়েও রাজত্ব করছেন বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মনে। আর মিষ্টি মেয়ে মৌসুমীকে পছন্দ করেনা এমন মানুষের খোঁজ পাওয়াও ভার। দুজনেরই প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যগুলো আজও দাগ কেটে যায় দর্শকের মনে। বাড়ি থেকে পালিয়ে বনের ভেতর, নদীর পাশে সালমান শাহ ও মৌসুমীর রোমান্সের দৃশ্যগুলো ভুলে যাবে এমন সাধ্য কার?
হঠাৎ বৃষ্টি:
আর একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর প্রেমের গল্পের নাম ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। বাংলা সিনেমার নায়ক ফেরদৌস আর কলকাতার প্রিয়াংকা ত্রিবেদীর এই সিনেমায় দুরত্বই যেন সবচেয়ে বড় রোমান্স। চিঠিতে দুজনের প্রেম বিনিময় দেখতে দেখতে নস্টালজিক হয়ে উঠেননি, একথা স্বীকার করার সামর্থ কার আছে?
ছুঁয়ে দিলে মন:
এক হৃদয়পুরের গল্প শুনিয়ে সবার মন ছুঁয়ে যায় আবীর ও নীলা। ছোট্টবেলার প্রেম কি আর কখনো ভোলা যায়। সেটা পারে না এই সিনেমার অভিনয় শিল্পীরাও। হৃদয়পুরের সেই প্রেমের গল্প শোনাতে গিয়ে প্রেমটাও বেশ জম্পেশ দেখিয়েছেন এই সিনেমার পরিচালক শিহাব শাহীন।
শ্রীকান্ত-রাজলক্ষ্মী:
বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক জুটি বলতেই মনে আসবে শ্রীকান্ত-রাজলক্ষ্মীর নাম। সাহিত্যের মতো সিনেমাতেও এক অনবদ্য জুটির নাম শ্রীকান্ত-রাজলক্ষ্মী। শ্রীকান্তের চরিত্রে অভিনয় করা বুলবুল আহমেদ আর রাজলক্ষ্মী শাবানার লুকোচুরি প্রেমের দৃশ্যগুলোর রোমান্স কারো ভোলার কথা নয়। শ্রীকান্তের ক্রমাগত মেয়েটির পরিচয় জানতে চাওয়া এবং রাজলক্ষ্মীর এড়িয়ে গিয়ে লুকিয়ে শ্রীকন্তের দিকে নজর রাখাও এক অসাধারণ রোমান্টিক দৃশ্যের অবতারণা করে পুরো সিনেমাজুড়ে।
সিনেমাতে আর কিছু থাক না থাক রোমান্স না থাকলে সিনেমার আনন্দই মাটি হয়ে যায়। আর প্রেম আছে তো সব আছে, প্রেম নেই তো কিছু নেই। সিনেমাকে ভরপুর বিনোদনের করে তুলতে পারে পর্দার রসায়নই।