আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন: রজনীগন্ধার গান গেয়ে লাভ নেই, যেখানে মেশিনগানের গর্জন। এয়ারকন্ডিশন ঘরে বসে সেমিনার করার সময় আর নেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে হবে। এটাকে আর ইগনর করার সময় নেই। তাই দলীয় প্রচারের বিস্তার এবং অপপ্রচার রোধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শক্ত অবস্থান তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির আয়োজিত ‘দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দলের প্রচার কৌশলে ভিন্নতা আনার তাগিদ জানিয়ে ওবায়দুল বলে: আমাদের নেত্রীর রাজনীতির লক্ষ্য তরুণ অথাৎ নেক্সট জেনারেশন এবং নির্বাচন। তরুণদের আমাদের কাছে টানতে হলে প্রথাগত প্রচার কৌশলে তেমন সাফল্য আসবে না। নির্বাচনের মাঠে কার্যক্রম শুরু হবে আর অল্প সময়ের মধ্যে।
ঘরে বসে করার সময় নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচারটা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা শক্ত কোন জবাব দিতে পারছিনা। দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটিকে এগুলো নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন: আপনারা সক্রিয়, কিন্ত যখন যেটায় গুরুত্ব দেওয়ার সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে আমাদের স্লোগান কি হবে সেটা এখনও আমরা ঠিক করতে পারিনি। ব্যর্থতার জন্য প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটিকে দায়ী করেন ওবায়দুল কাদের।
স্লোগান ঠিক করার বিষয়ে তিনি বলেন: সেটা হতে পারে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আরও শক্তিশালী অবস্থানের দরকার বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটাকে আর ইগনর করার সময় নেই। সব বদলে যাচ্ছে, আমাদেরও বদলাতে হবে, সময়ের সঙ্গে প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
এখন এয়ারকন্ডিশন রুমে সেমিনার না করে তাপ দগ্ধ মাঠে বেরিয়ে পড়তে হবে। ঢেউ অতিক্রম করার নামই চ্যালেঞ্জ, এটার নামই জীবন।
তাই প্রচারে নামতে হবে। প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে, রি-অ্যাকটিভ হয়ে লাভ নাই। রি-অ্যাকটিভ হবেন রি-অ্যাকটিভের সময়।
নির্বাচেন ঐক্যের যে ডাক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিয়েছেন তার জবাবে কাদের বলেন: এ দায়িত্ব ফখরুল সাহেব নিতে পারেন। যদিও তাদের নিজেদেরই ঐক্য নেই। নির্বাচন কেন্দ্রিক তারা কখনও তত্বাবধায়ক সরকার কখনও নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলছেন। তাদের নিজেদেরই ঐক্য নেই। আমি শুধু বলবো, আমাদের সমানে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে দেশে যেটা হবে আপনারা তার বাইরে কেন যেতে চাচ্ছেন?
বিএনপি গণ-অভ্যুর্থানের যে ডাক দিচ্ছে তার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন: আমি তাকে (ফখরুল) বলতে চাই, গণঅভ্যুত্থান করবেন? ফখরুল সাহেবের পাশাপাশি মওদুদ সাহেবও বলছেন। মওদুদ সাহেবকে বলবো, অভ্যুত্থান যখন হয় আপনি দেশে থাকেন না। আর ফখরুল সাহেব আপনি তো বাম রাজনীতি থেকে এসেছেন। আপনাকে প্রশ্ন করবো: গণঅভ্যুত্থান করার মতো বস্তুগত পরিস্থিতি এবং সংগঠনগত অবস্থাও আপনাদের নেই। অভ্যুত্থান করবেন কীভাবে?
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন: রাজপথে এসে লাভ নেই। দণ্ড দিয়েছে আদালত, ক্ষমা করার দায়িত্বও আদালতের। বেগম জিয়াকে যদি ভালোবাসেন তাহলে আইনি লড়াই করে তাকে মুক্ত করুন।
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: অপরাধ করে অপকর্ম করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না। এ বিষয়ে আমাদের নেত্রী অবস্থান জিরো টলারেন্স। দেখুন আমাদের দু’তিন জন এমপি কারাগারে। অপকর্মের বিচার হবে না, তা আমাদের কালচারে নেই। ছাত্রলীগকে নিয়ে নতুন করে ভাবছি। সমানে ছাত্রলীগকে নতুন করে রিকাস্ট করার উদ্যোগ আমাদের আছে।
তারেক রহমানকে নির্বাচনের আগে দেশ ফিরিয়ে আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: তারেক রহমানের সাহস আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। বিদেশে বসে বোমা কথা ফাটাচ্ছেন কেনো। জেলের ভয়ে বিদেশে বসে আছেন কেনো। বিদেশে বসে দেশের রাজনীতি করবেন, এটা তো হতে পারে না। বিএনপির ডাকে মানুষ সাড়া দিচ্ছে না, আপনি জোর করে আন্দোলন করবেন!
নিজের কমিটির ‘জাম্বোজেট’ ৫০০ সদস্যকেও তো রাস্তায় নামাতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।
মন্ত্রী বলেন: ৭ ধারা বাতিল করে তারা তাদের মুখোশ ৭ ধারা বাতিলেন মধ্যদিয়ে উন্মোচিত হয়েছে। তারা এখন আত্ম-স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দল।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন: নির্বাচন একটি লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। নির্বাচনমূখী প্রচারণার দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হবে। আমরা এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে নতুন কৌশল অবলম্বন করা শুরু করেছি। আমাদের একটা একটিভ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক পেজ রয়েছে। সেদিকটাতে নজর দিতে হবে। আমাদের এর চাইতেও ব্যাপক প্রচারণা আনতে হবে। এটাই সম্ভবত আমাদের (প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটি) শেষ সেমিনার। খুব প্রয়োজন না হলে আর সেমিনার করা হবে না।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন: উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত বাংলাদেশের জন্য অসামান্য বড় অর্জন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। দুইটি শর্ত পূরণ করলেই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ তিনটি শর্ত পূরণ করেছে তা নয়। তিনটি শর্ত পূরণ করে সেইগুলোকে অতিক্রম করে আরও বহুদূর এগিয়ে গেছে।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, গত ৫০ বছরে বিশ্বে মাত্র তিনটি দেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এটি জাতীর জন্য অসামান্য বড় অর্জন। এই বাংলাদেশ এক সময় খাদ্য ঘারতির দেশ ছিল। পঞ্চাশ দশক থেকে এই পূর্ব বাংলার বাংলাদেশ খাদ্য ঘারতির দেশ ছিল। সেই দেশকে শেখ হাসিনা তার জাদুকরি নেতৃত্বে শুধু খাদ্যতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত করেছে।
সেমিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোঃ ফরাস উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুজ্জামান, এহসান আলম পারভেজ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম।