সেপ ব্লাটার টানা পঞ্চম বারের মতো ফিফা’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপের ফুটবল মহল। ব্লাটার পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় হতাশার সুর ইউয়েফা প্রধান মিশেল প্লাটিনির কণ্ঠে। এর ফলে সংস্থাটিতে কাঙ্খিত পরিবর্তনের সুযোগ হাতছাড়া হলো বলে মনে করেন তিনি। তবে সৌজন্যবশত ব্লাটারের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঠিকই।
দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবতে বসা ফিফায় পরিবর্তন আনতে ইউয়েফার কঠোর অবস্থান ও সমর্থন দিতে পেরে গর্বিত বলে জানান প্লাটিনি। এজন্য প্রিন্স হুসেইন ও তাকে সমর্থনকারী ন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি তিনি। নির্বাচনে ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রিন্স হুসেইন’র পাওয়া ৭৩ ভোটের অধিকাংশই ছিলো ইউয়েফা’র ৫৩ সদস্য দেশের।
প্লাটিনির মতোই ফিফার নেতৃত্বের পরিবর্তন আশা করেছিলেন জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কর্তা উলফগ্যাং নিয়েসবার্গ। ইউরোপিয় ফুটবল ব্যক্তিত্বরা ফিফার নেতৃত্বে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলেন বলে জানান তিনি। ৭৯ বছর বয়সী ফিফা প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তিনি বলেন, এই বয়সে নতুন করে তার (ব্লাটার) আর কিছুই দেয়ার নেই। তিনি যা দেয়ার তা তো দিয়েছেনই। একটি শক্তিশালী ফিফা পাওয়া এখন কঠিন হয়ে গেলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্লাটার নির্বাচিত হওয়ায় একইভাবে হতাশা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল প্রধান সুনীল গুলাটি। তিনি বলেন,ফিফাকে আরও বেশি কার্যকর দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য চাপ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ফিফাকে দায়িত্বশীল,জবাবদিহিতামূলক এবং স্বচ্ছ সংস্থা হিসেবে দেখতে চায় ফুটবল বিশ্ব। যে সংস্থাটি নিবেদিত হবে শুধুই ফুটবলের স্বার্থে।
ফিফা’য় সেপ ব্লাটার: ১৯৩৬ সালে সুইজারল্যান্ডের ভিসপ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন সেপ ব্লাটার। ১৯৭৫ সালে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে ফিফায় তার পথ চলা শুরু। ১৯৮১ সালে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এই দায়িত্ব পালন করেছেন টানা ১৭ বছর। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার প্রধানের পদ আকড়ে আছেন তিনি।
যতো অভিযোগ তার আমলে: ফিফার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেক দিন ধরেই। সর্বশেষ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ফিফার সাত কর্মকর্তা। তারা হলেন সহ সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার, নিকোলাস লিওজ, ইগুইনো ফিগুয়েরেদো, ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি হোসে মারিয়া মারিন, কোস্টারিকা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এডুয়ার্ডে লিও, ভেনেজুয়েলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রাফায়েল এসকুইভেল এবং কনক্যাকাফ সভাপতি জেফরি ওয়েব।
এফবিআই বলছে, ২৪ বছর ধরে ফিফার গভার্নিং বডির কর্মকর্তারা নয় ছয় করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১ শ’ কোটি ডলার। ২০১০ সালে সাউথ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ স্বত্ব পাইয়ে দেওয়ায় ঘুষের লেনদেন হয়েছে। গ্রেফতার সাতজনই শুধু নয় আরো সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধও অভিযোগ রয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষের। ফিফা সভাপতি নির্বাচনের আগে দুর্নীতির এই অভিযোগ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ফিফাকে। সুইস পুলিশও নতুন করে খতিয়ে দেখছে অভিযুক্তরা রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপ ও কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ স্বত্ব নিয়ে ঘুষ নিয়েছিলো কি না।
অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের ২০ বছরের জেল হতে পারে। ফুটবলের জন্য এই সময়কে কঠিন আখ্যা দিয়ে ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সংস্থাটি থেকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন।