ভারতের সাবেক নৌ কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবের (৪৭) ফাঁসি স্থগিত করতে বলেছে আন্তর্জাতিক আদালত। এই মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগপর্যন্ত পাকিস্তানকে মৃত্যদণ্ড স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের ১১ জন বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় দেয়।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে জম্মু-কাশ্মির নিয়ে উত্তেজনা উত্তরোত্তর বাড়ছেই। পরস্পরের প্রতি সীমান্তে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ, সম্প্রতি দুই ভারতীয় সেনাকে হত্যার ঘটনা উত্তাপ ছড়ায়। এর মধ্যেই কুলভূষণ যাদবের ঘটনা নিয়েও মুখোমুখি অবস্থানে দুই দেশ।
ভারতের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সালে যাদবকে আটক করে পাকিস্তান। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি ‘ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে পাকিস্তানের নিরীহ জনগণ ও অবকাঠামোর উপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার’ কথা স্বীকারও করেছে সে। গত মাসে পাকিস্তানের সামরিক আদালত যাদবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের কাছে ভারতের দাবি, যাদব নির্দোষ। তাকে বছরাধিককাল পাকিস্তান কারারুদ্ধ করে রেখেছে এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পথে।
কুলভূষণ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ বার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাস। কিন্তু সেই আবেদন ১৬ বারই প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। অন্য দেশের নাগরিককে বিচারাধীন অবস্থায় তাঁর নিজের দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দিয়ে পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে, এমন অভিযোগ জানিয়েই ৮ মে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয় (অপরাধে অভিযুক্ত বিদেশীদের কূটনৈতিক সাহায্য নিশ্চয়তা দেয় ভিয়েনা কনভেনশন)।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে এই বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কুলভূষণকে যেকোনো সময় ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে নয়াদিল্লি। যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তার প্রমাণ প্রকাশে অস্বীকার করারও অভিযোগ ছিলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
এ মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড যেন কার্যকর না হয়, তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আজ রায় দিয়েছে আইসিজে। পাশাপাশি আদালতের রুলে বলা হয়, কুলভূষণের জন্য কনস্যুলার সুবিধা (তার সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধিদের দেখা করতে দেওয়া) চাওয়ার অধিকার ভারতের রয়েছে। পাকিস্তানের দাবি ছিলো, গুপ্তচরবৃত্তিতে অভিযুক্ত কেউ এই ধরনের অধিকার পায় না।
তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মৃত্যদণ্ড (যাদবের) শীঘ্রই কার্যকর হচ্ছে না এবং আইনী প্রতিকারের জন্য যাদব আগামী আগস্ট পর্যন্ত সময় পাবেন।