ছোঁয়া পরিবহনের যে বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল, সেই বাসটি নাম পাল্টে রুপার পরিবারকে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সেই বাসটি এখন বাজেয়াপ্ত অবস্থায় পুলিশের কাছে রয়েছে।
রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে রোববার ৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এই মামলার আরেক আসামিকে ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো – ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর রহমান (৪৫), চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯)।
ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগী হলেও বয়স বিবেচনায় বাসের সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) ৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
ঘটনার দিন রুপা যে বাসে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন, ছোঁয়া পরিবহনের সেই বাসটি বাজেয়াপ্ত রয়েছে পুলিশের কাছে। নাম পরিবর্তন করে সেটাই তার পরিবারকে হস্তান্তর করার আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া জরিমানার এক লাখ টাকাও রুপার পরিবারকে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সোমবার রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল।
গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে কর্মস্থল ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা চলন্ত বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়।
পরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রুপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা একটি মামলা দায়ের করে।
পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত নিহত রুপার ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে থানায় সংরক্ষিত ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করেন।
এরপর ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কে চলাচলরত ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে মধুপুর থানা পুলিশ।
তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু। মামলার বাদী মধুপুরের অরণ খোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম ও রুপার ভাই হাফিজুর রহমান ভাই, পুলিশের জব্দ তালিকা, সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, ৫ আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ২৭ জন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য দেন।