বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডকে ভয়াবহ সমরাস্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান।
সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি অাদালতবে বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলও হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলোকে আর্জেস গ্রেনেড বলেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা।
“আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে একুশে আগস্টের হামলায় আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল একজনকে হত্যা করতে নয়, একসঙ্গে অনেক মানুষকে হত্যা করা।”
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।
আদালতকে সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ২১ আগস্ট ৯টি স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয়। পরে অবিষ্ফোরিত ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার হয়। যার ৩টি জব্দ করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে এ গ্রেনেড সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা তৈরি হয় পাকিস্তান ও অষ্ট্রিয়ায়।
“২১ আগস্ট হামলার পর অবিস্ফোরিত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানোর পর এ ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায়। যা মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
সিআইডি’র পরিদর্শক ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ মো: মোসলেম আলীর দেয়া সাক্ষ্য থেকে গ্রেনেড সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি বলেন, যে সব অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল সেগুলো সেফটি পিন লাগানো ছিল এবং সুরক্ষিত ছিল।গ্রেনেডগুলো সবুজ জলপাই রংয়ের আর্জেস গ্রেনেড।
তিনি আদালতকে জানান, ওই হামলার পর ভয়াবহ এ ঘটনার বিষয়ে ৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। যা এ মামলায় উল্লেখ রয়েছে। মামলাটি মোট ৬ জন কর্মকর্তা তদন্ত করেন।
তদন্ত কর্মকর্তাদের এ মামলা তদন্তে কি কি ভূমিকা ছিল যুক্তিতর্কে তুলে ধরে রেজাউর রহমান বলেন, মামলায় ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।
“প্রায় এক বছর ১০ মাস তদন্ত করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। প্রথম অভিযোগপত্রে ২২জনকে আসামী করা হয়েছিল।”
শুনানির সময় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ আটক আসামিদের হাজির করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।
সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি কিছুটা নষ্ট হয়।
এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়।