একের পর এক পূর্বাভাস মিললেও শতবছরে এসে পূর্ণতা পেলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের এ সরাসরি শনাক্তকরণকে বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো এবং তত্ত্বীয় পদার্থবিদ অধ্যাপক আলী আসগর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সরাসরি শনাক্তকরণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ আবিস্কারের ফলে এতোদিন আঁধারে থাকা অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।
এতোদিন ধরে তল খুঁজে না পাওয়া মহাবিশ্ব সৃষ্টি তত্ত্ব (বিগ ব্যাং), ব্লাক হোল, সুপার নোভা থেকে শুরু করে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মতো তত্ত্ব পূর্ণতা পাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট এ বিজ্ঞান লেখক।
১৯১৫ সালে স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন সর্বপ্রথম আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ধারণা দেন। তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সরাসরি শনাক্তকরণ ছাড়া তা পূর্ণতা পাচ্ছিলো না। আপেক্ষিকতার শত বছরের ইতিহাসে ‘হিগস বোসন’ কণার আবিস্কারকে ধরা হতো সব চেয়ে বড় অগ্রগতি।
আইনস্টাইনের তত্ত্ব নতুন আবিস্কারের ফলে পূর্ণতা পেলে মন্তব্য করে আলী আসগর বলেন, আইনস্টাইন ১০০ বছর আগে যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন তা আজ সত্য প্রমাণিত হলো। ইতিপূর্বে এ তত্ত্বের সমর্থনে বেশ কিছু প্রমাণ মিললেও সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিলো না। এবার সেটা পূর্ণতা পেলো।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত বলে মন্তব্য করেছেন স্টিফেন হকিং।
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব মতে: ১৪০০ কোটি বছর আগে মহাবিস্ফোরণ বা ‘বিগ ব্যাং’এর মাধ্যমে পৃথিবীর সৃষ্টি। ‘বিগ ব্যাং’ এমন একটি আলোড়ন-যা উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে। ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব’ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আকারে তা ছড়িয়ে পড়ে।
পুকুরে মাঝে যেমন ঢিল ছুঁড়ে দিলে পতন স্থল থেকে তরঙ্গের সৃষ্টি করে ঠিক তেমনেই পৃথিবী থেকে ১.৩ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের দু’টি ব্লাক হোল বা কৃষ্ণ গহবরের সংঘর্ষের ফলে ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব’ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। তাই এখনও আগের মতোই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের দ্রুত বিস্তার ঘটছে। আর অসম্ভব দ্রুতগতিতে মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হয়ে চলেছে।
এই ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব’ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গেরই তল এতোদিন খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিজ্ঞানীরা। তাই শত বছর পর সবার ভেতর আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সংশোধনের চিন্তাও এসেছিলো বিজ্ঞানীদের মাঝে। তবে আপেক্ষিকতার শত বছর পূর্তিতে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের আবিস্কারে আইনস্টাইনই সত্য বলে প্রমাণিত হলেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী আসগর বলেন: এতো দিন নিউটনিয় তত্ত্ব এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সাংঘর্ষিক ছিলো। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিস্কারের ফলে আইনস্টাইনই যে সঠিক ছিলেন সেটা প্রমাণিত হলো।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ব্যবহার করেছেন। পৃথিবী থেকে ১০০ কোটিরও বেশি আলোকবর্ষ দূরে দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে স্থান-কাল কীভাবে বেঁকে যায় তা তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন।