রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বলছে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স একদিনেই বেড়েছে ২৩২ পয়েন্ট বা ৫ শতাংশ। যা সূচকটি চালু হওয়ার ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাথে লেনদেনও বেড়েছে বড় ব্যবধানে।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ডিএসইএক্স সূচক। তখন সূচকটির ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৬ পয়েন্ট। এরপরে গত ৭ বছরের মধ্যে আজ রোববার সূচকটির সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সূচকটি ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার) লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা রোববারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
দফায় দফায় সূচকের পতনে গত বছরজুড়ে ছিল পুঁজিবাজার ব্যাপক অস্থিরতা। বাজারে বড় ধস ঠেকানোর জন্য নীতি-নির্ধারক মহল, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজার চাঙ্গা হয়নি।
তবে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিএসইসির বৈঠকে পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বেশকিছু ইতিবাচক দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর দুই-একদিন বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে সরকারি ৪ ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্প্রতি বিদেশি টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে ইয়াসির আজমানকে নিয়োগ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এসব ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণেই মূল্যসূচক রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯৯৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্টে।
এদিন লেনদেনও বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ারের। যা গত কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার) থেকে ১৪৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি। বৃহস্পতিবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
আজ ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪৬টির, কমেছে ৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির।
আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৭৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৩ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বাজারে ব্যাপক দরপতনের কারণে ১৬ জানুয়ারি শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।
ওইদিন বিএসইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করবে। সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ অচিরেই কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তার জন্য মতামত দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবি’র বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, বাজারে আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এসব সিদ্ধান্তের কারণেই আজ সূচকের বড় উত্থান হয়েছে বলে মনে করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।