বিশিষ্ট পার্লামেন্টিরিয়ান, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি দেশের প্রথম সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’
তিনি বলেন, দেশের সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিশাল অবদান জনগণ তাদের স্মরণে রাখবে। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
প্রধানমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। দেশ এক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে হারালো আর আওয়ামী লীগ হারালো দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে।’
শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী ও সুসংহত করতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত দেশের প্রথম সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কূটনীতিকরা।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ এক শোক বার্তায় দেশ ও গণমানুষের কল্যাণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি (সুরঞ্জিত) ছিলেন গণমানুষের নেতা।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, সদ্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাতীয় সংসদে একজন বিখ্যাত পার্লামেন্টেরিয়ান ছিলেন। তিনি যখন সংসদে বক্তৃতা করতেন, তখন সকলে তাকে তন্ময় হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবিদ ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তিনি খুব স্পষ্টভাষি ছিলেন। যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন। কোন রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিলনা তার মধ্যে।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন জনদরদী ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে হারালো।
এই রাজনীতিবিদের সঙ্গে বহুবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সাক্ষাৎ হয়েছে উল্লেখ করে শেষবারের স্মৃতিচারণ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে জাতীয় সংসদ চত্বরে সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল। তিনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’ এই কূটনৈতিক বলেন, ‘তিনি নিঃসন্দেহে একজন খ্যাতিমান, বিচক্ষণ ও মর্যাদাশীল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’
রোববার ভোর ৪টা ২৪ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন।
১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জের আনোয়ারাপুরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম। প্রথম জীবনে বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগের এ নেতা দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম জাতীয় সংসদসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।