নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এক গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলার আসামি রুহুল আমিনের আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল ও হলফকারীর (তদবিরকার) মো: জহিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রুহুল আমিনের জামিনের পক্ষের আইনজীবী ও হলফকারীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সেই সাথে বুধবার আদালত রুহুল আমিনের জামিন আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।
বুধবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। আর অপর পক্ষে ছিলেন রুহুল আমিনের জামিন আবেদনকারী আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল।
বুধবার রুল জারির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘কোন একটি জামিন আবেদনে মামলার সমস্ত তথ্য দিতে হয়। কিন্তু রুহুল আমিনের জামিন আবেদনের মধ্যে সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়নি। আর এই মামলায় যে কয়েকজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল, তাও দেওয়া হয়নি। আর ২২ ধারায় দেওয়া ওই নারীর জবানবন্দিও জামিন আবেদনে দেওয়া হয়নি। এগুলো তখন দেওয়া হলে হাইকোর্ট মূল ঘটনা জানতে পারত। তখন জামিন আদেশ হয়ত হতো না। কিন্তু এ আইনজীবী তথ্যগুলো গোপন করে প্রথমে জামিন আদেশ নেন। কিন্তু পরে হাইকোর্ট সে জামিন আদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করেন।’
এদিকে রুহুল আমিনের আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল দাবি করেছেন, ‘হলফনামাকারী তাকে বিভ্রান্ত করেছেন।’
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পর এক গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার আসামি রুহুল আমিনকে দেওয়া জামিন আদেশ গত শনিবার প্রত্যাহার করে নেন হাইকোর্ট। তবে এর আগে গত সোমবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চই রুহুল আমিনকে এক বছরের অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিলেন।
আলোচিত এই জামিন আদেশের পর আসামি পক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তোলা হয়। এবং এ বিষয়ে ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আসামির আইনজীবী জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য এক বেঞ্চে ফাইল করেন। কিন্তু শুনানি করেন অন্য বেঞ্চে। আর যেদিন এই জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে।’
এরপর আলোচিত এই জামিনের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের নজরে আনলে জামিন দেয়া হাইকোর্ট বেঞ্চ গত শনিবার ছুটির দিনে চেম্বারে বসে আগের জামিন আদেশ প্রত্যাহারের (রিকল) সিদ্ধান্ত দেন।
ওই সিদ্ধান্তের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামি পক্ষের ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বার কাউন্সিলে দরখাস্ত করব। এবং আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হবে।’
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের পর রাতে সুবর্ণচরের মধ্যবাগ্যা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ ওই নারীকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়। এরপর ওই গৃহবধূর স্বামীর করা মামলায় রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তবে ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।