চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সুন্দর উইকেটে ‘সর্ষেফুল’ দেখলেন কোহলিরা

অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে রোহিত শর্মাকে দলে না দেখে বিরাট কোহলিকে একহাত নিয়েছে ভারতীয়রা। পরে অধিনায়কের এক টেস্ট খেলে দেশে চলে যাওয়ার ঘোষণাও তাদের ভালো লাগেনি। সিরিজ শুরুর আগে টুকরো টুকরো বিতর্ক যেন নাড়িয়ে দিয়েছে ভারত দলের মনোবল। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কোহলিদের উপর দাপটের চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখিয়ে ছেড়েছেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা।

সিরিজ রক্ষার ম্যাচ, জানপ্রাণ দিয়ে লড়লেন বিরাট কোহলিরা। লড়লে কি হবে, ম্যাচ আগে শেষ হয়ে বসে আছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩৯০ রান তাড়া করে জিতে যাবে প্রতিপক্ষ, এমনটা ইতিহাস তো কখনো রচিত হয়নি, রোববারও হল না।

৩৩৮ রানে থেমে ৫১ রানে হেরে কোহলিরা হয়ত ভাবছেন, আরেকটু সময় উইকেটে থেকে যেতে পারলে সিডনির সুন্দর উইকেটে ২-০তে সিরিজ না হেরে ১-১ সমতা টানা হয়ত যেত! আদতে ম্যাচে জয়ের অবস্থায় কখনোই ছিল না সফরকারীরা, কমিয়েছে কেবল হারের ব্যবধানটা।

দিনের প্রথম ইনিংস শেষেই মোটামুটি ফলাফল বোঝা গেছে। সিরিজ হারতে চলেছে ভারত। অজি ব্যাটসম্যানরা মিলে এমন পেটানোই পেটালেন সফরকারী বোলারদের, ৩৯০ রানের লক্ষ্য দাঁড়াল ভারতের সামনে।

এদিন শুক্রবারের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বললে খুব একটা অনুচিত হবে না। ওই ম্যাচে উদ্বোধনীতে ১৫৬ রান তুলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। রোববার দুজনে গড়লেন ১৪২ রানের জুটি। পার্থক্য বলতে, আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন অধিনায়ক ফিঞ্চ, এদিন আউট ৬৯ বলে ৬০ করে।

কপাল মন্দ ওয়ার্নারেরও, এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। ৭৭ বলে ৮৩ করে রানআউটে কাটা পড়ছেন। ফিল্ডিংয়ের সময় আবার পড়েছেন চোটে। কাঁধে করে ওয়ার্নারের মাঠ ছাড়ার দৃশ্য বলে দিচ্ছিল, ভালো চোটই পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার।

১৫৬ রানে দুই ওপেনার ফিরে গেলেও রানের গতি থামতে দেননি স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেন। ১৩০ বলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে তুলেছেন ১৩৬ রান।

লাবুশেনের ভরসায় একটা প্রান্ত সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্তে ভারতীয়দের পেটানোর কাজ করে গেছেন স্মিথ। ৩৮ বলে ফিফটির পর বলকে দেখেছেন ফুটবলের মতো, পরের ফিফটি মাত্র ২৪ বলে। ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ বলে ১০৪ রান করে ফেরার আগে অস্ট্রেলিয়াকে দিয়ে যান বড় রানের পুঁজি।

স্মিথ ফেরার পর বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আইপিএলজুড়ে একটিও ছক্কা মারতে না পারায় তাকে ‘দামি চিয়ারলিডার’ বলে খোঁচা দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্রর শেবাগ, ভারতীয়দের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজেই সেটা ফিরিয়ে দিচ্ছেন ম্যাক্সি। আগের ম্যাচে খেলেছিলেন ১৯ বলে ৪৫ রানের ইনিংস, এবার তুলেছেন ২৯ বলে ৬৩ রান। ৪ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার নিশ্চয় জ্বালা বাড়াবে শেবাগের মনের!

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছেন নবদ্বীপ সাইনি। ৭ ওভারে ৭০ রান দেয়ার পর তাকে আর বোলিংয়েই আনেননি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। রান বিতরণে কম যাননি মোহাম্মদ শামি কিংবা জাসপ্রিত বুমরাহ। ৯ ওভারে ৭৩ রান দিয়েছেন শামি, ১০ ওভারে ৭৯ রান খরচ বুমরাহর। দুজনে একটি করে উইকেট পেয়েছেন। এরচেয়ে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে খানিকটা কৃপণ ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া!

লক্ষ্য যেটাই হোক, মোটামুটি একটা শুরু এনে দেন দুই ওপেনার শেখর ধাওয়ান ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ৪৬ বলে ৫৮ রান তোলার পর ছন্দপতন, ৩০ রানে ফেরেন ধাওয়ান। দুই রান পরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে হাঁটা দেন আগারওয়ালও।

শ্রেয়াস আয়ারকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নেমে পড়েন অধিনায়ক কোহলি, তৃতীয় উইকেট জুটিতে আনেন ৯৩ রান।

৩৮ রানে আয়ার আউট হলে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে লড়াইয়ের আগুনটা জিইয়ে রেখেছিলেন কোহলি। ব্যাটিং অনুকূল উইকেট ছিল, ৪০ ওভারের পর হাত খোলা। কিন্তু তার আগেই আঘাত হানেন হ্যাজেলউড। নিজের ২৫০তম ওয়ানডেতে ৪৪ নাম্বার সেঞ্চুরি তুলে অজি কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকে ছুঁয়ে ফেলার অপেক্ষায় যখন কোহলি, ময়েজেস হেনরিক্সের ক্যাচ বানিয়ে তাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান হ্যাজেলউড।

ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন সেখানেই শেষ! কোহলি ফেরার পর ৭৬ রান তুলে শেষ চেষ্টা করেছিলেন রাহুল, সেটা কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে।