সুনামি সতর্কতায় নতুন প্রযুক্তি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। নতুন প্রযুক্তি সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধসের কারণে হওয়া সুনামি সনাক্ত করে আগেভাগেই সতর্ক করতে পারবে।
আগামী বছর এ প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি সরকারি সংস্থা।
নতুন এই পদ্ধতিটি ঢেউয়ের আকার শনাক্ত করে সম্ভাব্য সুনামি সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ‘এজেন্সি ফর দ্য অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন অব টেকনোলজি’র মুখপাত্র ইয়ান তুরিয়ানা।
এতদিন ইন্দোনেশিয়ায় যে প্রযুক্তিটি ব্যবহৃত হচ্ছিল সেটিতে শনিবারের সুনামি ধরা পড়েনি।
কারণ হিসেবে তুরিয়ানা জানান, এই প্রযুক্তিটির কাজ ছিল ভূমিকম্প মনিটর করা, যা থেকে সুনামি হতে পারে। কিন্তু আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুদ্গীরণের কারণে সমুদ্রের তলদেশে হওয়া ভূমিধস মনিটর করার ব্যবস্থা এতে নেই।
অথচ এই ভূমিধস থেকেও ভয়াবহ ঢেউয়ের সৃষ্টি হতে পারে, যা এবার হয়েছে।
গত শনিবার ইন্দোনেশিয়ায় আনাক ক্রাকাটাও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে সমুদ্র তলদেশে ভূমিধসের কারণে সুন্দা প্রণালিতে সৃষ্ট সুনামিতে এ পর্যন্ত ৪২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৪৫৯ জন। এখনো নিখোঁজ দেড়শ’র বেশি মানুষ।
শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালিতে ভয়াবহ সুনামির সৃষ্টি হয়। পরপর দু’টো বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে উপকূলবর্তী পান্ডেগলাং, সাউথ লাম্পাং এবং সেরাং এলাকায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার ক্রাকাটাও আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ করেই উদগীরণ শুরু হয়। ২ মিনিট ১২ সেকেন্ড তীব্র মাত্রার অগ্ন্যুৎপাতে ছাই ও ধোঁয়ার মেঘ পাহাড়ের ওপর প্রায় ৪শ’ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ওই অগ্ন্যুুৎপাতের ফলে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হওয়ায় ভূমিকম্প থেকে সুনামির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করছে দুর্যোগ মোকাবেলা সংস্থা।
শুক্রবারের পর রোববার থেকে আনাক ক্রাকাটাওয়ে অগ্নুৎপাত অব্যাহত থাকায় নতুন করে সুনামির আশঙ্কায় উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
ধ্বংসস্তুপের নিচে কেউ জীবিত থাকতে পারে, এই আশায় উদ্ধারকর্মীরা জোর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সুনামির কারণে ধ্বংসস্তুপে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। তবুও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভারী যন্ত্রপাতি পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে, যেন ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করা যায়।
উদ্ধারকর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে যাচ্ছে। সুন্দা প্রণালির উপকূলীয় সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে জীবিত লোকজন খোঁজা হচ্ছে।
পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব, ওয়ার্নিং বয় ভেঙে ফেলা এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে ২০১২ সালের পর থেকে ইন্দেনেশিয়ায় কোনো সুনামি ওয়ার্নিং বয় বা সতর্কতাসূচক যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করেনি। ফলে কোনো রকম পূর্বসতর্কতা না পাওয়ায় এত মানুষ হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তামূলক সতর্কবার্তা পেলেও লোকজন প্রস্তুতি নেয়ার মতো যথেষ্ট সময় পেত না। কেননা আনাক ক্রাকাটাও সমুদ্রতীরের খুব কাছে।