সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
ছেলে সন্তান জীবিত না থাকায় উনার মুখাগ্নি করেন তার বড় দাদার ছেলে প্রণব দাস গোবিন্দ। এরআগে অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘর থেকে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার মরদেহ নজরুল ইনস্টিটিউটে আনা হয়।
প্রাণপ্রিয় নজরুল ইন্সটিটিউটে নেয়ার পর সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
এসময় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘর থেকে তার মরদেহ মিরপুরের বাসায় নেয়া হয়। সেখানে সকল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নেয়া হয় মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে। সেখানেও তাকে অসংখ্য মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
বেলা ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সুধীন দাশের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুধীন দাশকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, নজরুল সংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা, শিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদ, বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ফাউন্ডেশন, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এসময় রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনয় শিল্পী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ দলে দলে ফুল হাতে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
চিকিৎসকদের মতে, তার বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যা ছিল। হাসপাতালে আনার পর তার কিডনি, লিভার, হার্টসহ শরীরের বিভিন্ন অরগান স্বাভাবিকভাবে কাজ করেনি। এ কারণে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
চিকিৎসক যখন সুধীন দাশকে মৃত ঘোষণা করেন, তখন সেখানে ছিলেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি জানান, তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই কার্যালয়ে সুধীন দাশ স্মরণে একটি শোক বই খোলা হয়েছে।
সুধীন দাশকে ১৯৮৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। এরপর তাকে চ্যানেল আই নজরুল মেলায় আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। পেয়েছেন মেরিল–প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা, নজরুল একাডেমী পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।
সুধীন দাশ ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত গবেষক। বাংলাদেশে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন, তিনি তাদের একজন। সঙ্গীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করে নিজেকে সঙ্গীতের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। বাংলা গানকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তার অবদান অসীম।
তার বিশেষত্ব হচ্ছে নজরুলসংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসারে স্বরলিপি গ্রন্থ লেখা। সুধীন দাশ নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে ১৬টি ও নজরুল একাডেমি থেকে ৫টিসহ মোট ২১টি খন্ডের ‘নজরুলের গানের স্বরলিপি’ গ্রন্থ বের করেন। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তার অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তিনিই প্রথম লালনগীতির স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
ছবি: প্রদীপ চৌধুরী