ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই সুদ কমানোর জন্য আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠক করবেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। দেশের সবকটি ব্যাংকে ঋণের সুদ হার এখন দুই অংকের ঘরে। যা সর্বনিম্ন ১১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ পর্যন্ত।
বাংলাদেশে ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা গেছে, সুদ হার কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দিয়েছে এফবিসিসিআই। গভর্নর বরাবর লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন। আর এই জন্য চলতি মাসের শুরুতে বৈঠকে বসারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সেই চিঠির কোনো জবাব না পাওয়া শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদের হার। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। যাতে করে দ্রুত ব্যাংকের তারল্য সংকট নিরসন করে সুদ কমানো হয়।
চিঠি দেবার পরে সাড়া না পেয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার পর আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ ও আমানতের অনুপাত বা এডিআর কমিয়ে আনায় চরম নগদ টাকার সংকটে পড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এই নগদ টাকা বা তারল্য সংকটের কারণে আমানতের সুদ হার বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণের সুদ হারও বেড়েছে। ব্যাংক খাতের এই তারল্য সংকট নিরসন করে কিভাবে বিনিয়োগবান্ধব সুদ হার নির্ণয় করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে এফবিসিসিআই আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
এফবিসিসিআইর সভাপতি আরও বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের আরো বেশি আগ্রহী করে তুলতে হবে। সেজন্য ঋণ প্রাপ্তি সহজ ও সুদ হার এক অংকে নামিয়ে আনতে হবে।
“সুদ কমাতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। গভর্নরকে অনুরোধ করছি। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।”
সাধারণত ব্যাংকের সুদ হার কত হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয় না। ব্যাংকগুলো নিজেরাই তাদের ঋণ ও আমানতের সুদ হার নির্ধারণ করে থাকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, সুদ হার কত হবে তা ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঠিক করে। তবে আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান অর্থাৎ স্প্রেড ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংককে এই নির্দেশনা মানতে হবে- এমন বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি।
হু হু করে ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এখন ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে। এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। তাই সময় থাকতেই যেন সুদ হার কমিয়ে আনা হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।