সীমান্ত এলাকায় নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে নয় বরং অনাকাঙ্খিত মৃত্যু হিসেবে দেখছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) শ্রী রজনী কান্ত মিশ্র। অপরদিকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা জানান।
চলতি বছরেরর প্রথম পাঁচ মাসেই সীমান্ত এলকায় অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন এছাড়াও গত মে মাসে সাতক্ষীরা সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্যাতনে এক বাংলদেশি যুবক নিহতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ ডিজি বলেন: সীমান্ত এলাকায় নিহতের ঘটনা কখনোই হত্যাকাণ্ড নয়, এগুলো অনাকাঙ্খিত মৃত্যু। আমরা সবসময়ই জীবনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি, এজন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর পরেও মাঝে-মধ্যে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যায়, যা খুবই সামান্য থেকে সামান্যতম।
তিনি বলেন: গত বছর বাংলদেশ-ভারত সীমান্তে ৭ জন নিহত হয়েছেন, যার ৬ জনই ভারতীয়। এছাড়া, গতবছর একজন বিএসএফ সদস্যও নিহত হয়েছেন। সীমান্তে আমরা প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করছিনা, যার ফলে বিএসএফ সদস্যরা মাঝে-মধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সীমান্তে যে কোন পরিস্থিতি আমরা খুবই সহনীয়ভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য আমাদের ফোর্সকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এর মধ্যেও যে কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে, সেসব বিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা হচ্ছে। স্খানীয় পুলিশ বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছে বলেও জানান তিনি।
বিজিবির ডিজি সাফিনুল ইসলাম বলেন: দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) উপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন দেশের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে উভয়পক্ষই সিবিএমপি বাস্তবায়নে সম্মতি প্রকাশ করেছে। এ অনুযায়ী অসতর্কতার কারণে সীমান্ত অতিক্রমকারী সাধারণ নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে দ্রুত সোপর্দ করতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন: সীমান্ত এলাকায় বসবাসরতদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে নিহতের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছি।
ভারতীয় সীমান্ত হয়েও বাংলদেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ ডিজি বলেন: ইয়াবার যোগানদাতা তৃতীয় কোন দেশ। ইয়াবাসহ যে কোন মাদক পাচারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কঠোর।
এদিকে, ফেলানী হত্যার ঘটনাটি আদালতে বিচারাধীন, তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সীমান্ত এলাকায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এবারের আলোচ্য বিষয় ছিলোনা। তবে যে কোন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত তথ্য বিনিময় হচ্ছে। ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় যৌথভাবে বিভিন্ন অভিযান পরিচালিত হবে।
এছাড়া, সম্মেলনে মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ভারত থেকে বাংলদেশে চলাচল প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখাসহ পরস্পরিক সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে।
সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, স্বর্ণ ও জাল মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আওতায় চোরাচালান দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তির বিষয়ে তাৎক্ষনিক তথ্য এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
এবারের সম্মেলনে উভয়পক্ষ সীমান্তে নতুন ক্রাইম ফ্রি জোন চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করে কুমিল্লা এলাকায় ২য় ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১২ জুন থেকে বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪৮ তম সীমান্ত সম্মলেন শুরু হয়।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছেন। আর বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী রজনী কান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল রয়েছেন।