সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুলিশের সোয়াত টিমের সদস্যরা। যেকোনো সময়ে এ অভিযান শুরু হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’-এর সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর ১০-১২ জন সদস্য। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার কিছু সময় পর তারা এসে হাজির হন। সেনাবাহিনীর মেজর রোকন ও মেজর রাব্বি নেতৃত্বে প্যারা-কমান্ডো বাহিনী আশপাশ রেকি করছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশননের ২৭নং ওয়ার্ডের ‘আতিয়া মহল’ নামের ওই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। শুক্রবার সারাদিনে বার বার জঙ্গিদের আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেয়া হলেও তাতে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।পুলিশ প্রবেশ করতে গেলে বাড়ির ভেতর থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সোয়াতের একটি দল বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে।
সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিলো পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে শিববাড়ির ওই ভবনের সন্ধান পাওয়া গেল।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে বাড়ির আশপাশের ৫০ থেকে ৬০ গজ পর্যন্ত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে নিচ তলায় ‘সন্দেহভাজন জঙ্গিদের’ অবস্থান থাকায় বাড়িটি সম্পূর্ণ খালি করা সম্ভব হয়নি। হাত মাইকের সাহায্যে জঙ্গিদের আত্মসমর্পন করার আহ্বান জানানো হলেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি।
সকাল থেকে বাড়ির আশপাশের ৫০ থেকে ৬০ গজ পর্যন্ত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয় আশপাশের সব দোকানপাট। সোয়াত টিমের সঙ্গে আছেন মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও ‘আতিয়ার মহল’ নামে ভবনটির মালিক উস্তার মিয়া।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযান শুরু হবে এই বিষয়টি টের পাওয়ার পরপরই বাড়ির ভেতর থেকে জঙ্গিরা ‘আল্লাহু আকবর’ আওয়াজ তোলে। সকাল ৮টার দিকে বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেডও ছুড়ে মারা হয়। পাঁচতলা বাড়িটির নিচ তলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে। তারা ঘরের বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে বলেও জানান তারা।
মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বেলা একটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হ্যান্ডমাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্য ১টা ৪৮ মিনিট থেকে ২টা ১৬ মিনিট পর্যন্ত জঙ্গিরা সাড়া দিয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো উত্তর নেই।
সেনাবাহিনীর অবস্থান প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘জঙ্গিরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সেনাবাহিনীকে আনা হয়েছে। এই অভিযানে তাদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা নিতে চাই।’ধারণা করা হচ্ছে জঙ্গিরা আত্মসর্ম্পণ না করলে অল্প কিছুুক্ষণের মধ্যে তারা অভিযানে নামবে।
সোয়াতের টিম আসায় এখন অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা করছে পুলিশ। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ১০ বারের বেশি পুলিশের ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। বাড়িটির দুইতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ২৯টি ইউনিটে ২৯টি পরিবার রয়েছে। জানা গেছে, ওই বাড়িতে গত জানুয়ারিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে জঙ্গিরা। ‘স্বামী-স্ত্রী’ পরিচয় দিয়ে দুই জন আতিয়া মহল নামের পাঁচতলা ওই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। তাদের নাম কাওসার আলী ও মর্জিনা বেগম। বাড়ির মালিক উস্তার মিয়া সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তাড়াতাড়ি সোয়াত পাঠান, দেরি করছেন কেন?
দফায় দফায় পুলিশের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পনের নির্দেশের পর দুপুর একটার দিকে এক ব্যক্তি চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘ফোর্স পাঠান।’ এসময় উচ্চ স্বরে একজন বলে ওঠেন, ‘তাড়াতাড়ি সোয়াত পাঠান। দেরি করছেন কেন? আমাদের সময় কম।’ বেলা ১টা ৪৮ মিনিটের দিকে এক নারী কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা আল্লাহর পথে আছি। তোমরা আছো শয়তানের পথে।
জঙ্গিদের এই সাড়ার পর করণীয় ঠিক করতে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন এবং কৌশলের অংশ হিসেবে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।