যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় শরণার্থী শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে আরবি ভাষায় শিশুবিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান ‘সিসিম স্ট্রিটের’ সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ ‘আহলান সিমসিম’ নামে শিশুদের কাছে সবচেয়ে শিক্ষণীয় এই অনুষ্ঠান শরণার্থী ক্যাম্পে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করা হবে।
আইআরসি- এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় চলমান সংঘর্ষের ফলে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের প্রায় অর্ধেকই শিশু।
সিরিয়ায় যুদ্ধকালীন সময়ে কয়েক দশক যাবত অনেক পরিবার ফিরে আসতে না পারায় সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়েছে শিশুদের। অন্তত ৩০ লক্ষ শিশু জন্ম থেকে শুধু দেখছে, যুদ্ধের আতঙ্ক ও মৃত্যুর তাড়া ছাড়া জীবনে যেন আর কিছু নেই৷
এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির ফেডারেল সাইকোলজিক্যাল সেন্টারের চেয়ারম্যান বলেন, এই শিশুদের সারাজীবনই যুদ্ধাতঙ্কে কাটার আশঙ্কা৷ কেননা শরণার্থী শিশুদের শৈশবকাল কাটছে সহিংসতা এবং আনন্দহীন। চোখের সামনেই এই বাচ্চারা দেখতে পেয়েছে বাবা-মা,ভাই বোনের মৃত্যু।
‘পরিবারগুলো একটু সুরক্ষার আশায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই শিশু গুলো পাচ্ছে না খেলার মাঠ, প্রাথমিক শিক্ষা এমনকি সাধারণ স্বাস্থ্যগত কোনো শিক্ষা।’
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধান নির্বাহী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, বিশ্বে শরণার্থী শিশু শিক্ষার হার ২ শতাংশেরও কম। যেখানে অধিকাংশ শিশুর বয়স গড়ে ২০ বছর হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আহলান সিমসিম’-সিরিয়ায় শরণার্থী শিশুদের জন্য একটি নতুন উদ্যেগ। যার ঘোষণা সিসিম ইন্ডাস্ট্রি ২০১৬ সালেই দিয়েছিলেন।
এই দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যেগের প্রশংসা স্বরূপ ২০১৭ সালে ম্যাক আর্থার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল সিসিম স্ট্রিটের অনুষ্ঠানটি এমন ভাষায় প্রচার করা হবে যাতে সিরিয়ার শিশুরা খুব সহজেই বুঝতে এবং শিখতে পারে। তাই আরবি ভাষায় এই অনুষ্ঠান প্রচারের পরিকল্পনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটি।
সিসিম ওয়ার্কশপে বলা হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ‘আহলান সিমসিম’ শুরু হবে। তাদের লক্ষ্য ৩ থেকে ৮ বছরের শরণার্থী শিশুরা যেনো এই অনুষ্ঠান দেখে বুঝতে পারে এবং শিখতে পারে।
‘আহলান সিমসিমের’ প্রধান দুই চরিত্রের মধ্যে রয়েছে ছোট ছেলে জ্যাড। তার প্রতিবেশি মুপ্যাট এবং বাসমা। মুপ্যাট এই চরিত্রে জ্যাডের বন্ধু থাকে। আরও আকর্ষণীয় করার জন্য একটা বাচ্চা ছাগল চরিত্র এখানে আনা হয়েছে। সিসিমের পুরো ঘটনাকে আরও বেশি ছন্দময় করার জন্য।
মূলত মানবিক সংকটে থাকা শিশুরা যেন শৈশবের শুরুর দিকেই খেলাধুলাভিত্তিক বিকাশ লাভ করতে পারে তা নিশ্চিত করাকে জরুরিভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মনে করেন সিসিম ওয়ার্কশপ এবং ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি।