ছাত্রলীগের নির্বাচন সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের এ নিয়ে জানানো হলেও সুফল আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
কেউ কেউ নাম প্রকাশ করে এবং বেশিরভাগই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নামে কাউন্সিল হলেও সেখানে আসলে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। গত কয়েক কাউন্সিল ধরেই এমন চলছে জানিয়ে এজন্য তারা একজন সাবেক সভাপতির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী বলেছেন, ওই সিন্ডিকেট কাউন্সিলের আগে সারাদেশের কাউন্সিলরদের ম্যানেজ করে ফেলে। ফলে ভোট হয় শুধু নামে মাত্র!
‘সিন্ডিকেট আগেই প্রতি জেলায় তাদের নিজস্ব লোককে কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেয়। এই কাউন্সিলররা ভোটের দিন সিন্ডিকেটের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভোট দিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন,’ বলে অভিযোগ করেন সাধারণ সম্পাদক পদে একজন প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী বিপ্লব হোসেন পলাশ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সিন্ডিকেট এর কারণে এখন এই নির্বাচন শুধু লোক দেখানো। এবারের কাউন্সিলেও তার অনুসারীরাই নির্বাচিত হবেন।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রক হিসেবে তিনি ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতির নাম উল্লেখ করেন। সাবেক ওই ছাত্রনেতার বাড়ি ফরিদপুরে।
এমনই যদি অবস্থা তা হলে নির্বাচনে কেনো অংশ নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, জেলা থেকে নেতা কর্মীরা তাকে উৎসাহিত করেছেন। ‘সেজন্য আমি নির্বাচন পর্যন্ত এসেছি,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্রলীগের মতো সংগঠনে এরকম সিন্ডিকেটের অবসান চেয়ে বিপ্লব হোসেন পলাশ বলেন, এমন অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে মেধাবী তরুণরা আর রাজনীতিতে আসবেন না।
তবে সবাই যে একইরকম মনে করেন তা নয়। তাদের একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে আগ্রহী শামসুল কবির রাহাত। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই হবে।
শনিবার দুইদিনের কাউন্সিল শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে সিন্ডিকেট এবার সভাপতি পদে সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জাকির হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন কথাও আছে যে প্রথমবারের মতো একজন সভানেত্রী পেতে পারে ছাত্রলীগ। সে হিসেবে শারমিন সুলতানা লিলির নাম আলোচিত হচ্ছে।
দুইদিনের কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিন রোববার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
নির্বাচন পরিচালনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে মোট ২৪২টি। সভাপতি পদে ৮০টি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬২টি মনোনয়ন বিক্রি হয়।
যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন সভাপতি পদে ৬৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪২ জনকে প্রতিন্দ্বিতা করার সুযোগ দিয়েছে।
নির্বাচনে মোট ভোটার দুই হাজার ৯৭৫ জন।
এর আগে ২০১১ সালের ১০ জুলাই ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিলো। তার আগে ২০০২ এবং ২০০৬ সালের সম্মেলনে গোপন ব্যালটে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিলো।
২৯ বছর বয়সীর বেশি কেউ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অাসতে পারেন না। তাদেরকে অবিবাহিত এবং নিয়মিত ছাত্রও হতে হয়।