করোনা বিস্তার রোধে ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। ১৬ মার্চ যৌথভাবে সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতি। এরপর পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও করোনার কারণে দেশের সব সিনেমা হলে ঝুলছে তালা। এদিকে বেশকিছু নির্মিত সিনেমা নিয়ে দিন গুনছেন পরিচালক, প্রযোজকরা। কেউ কেউ নির্মিত চলচ্চিত্রটি নিয়ে বিকল্প চিন্তাও করছেন, অনেকে ভাবছেন ডিজিটাল প্লাটফর্মে সিনেমা মুক্তির।
তবে সিনেবিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমনিতেই দেশের সিনেমা হল কমতে কমতে আশির ঘরে (নিয়মিত হল সংখ্যা) এসে ঠেকেছে। করোনার কারণে বন্ধ হওয়ায় এগুলো নতুন করে চালু হওয়া নিয়েও আছে শঙ্কা। অনেকে মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলোর মধ্যে ঋণের দায়ে বেশকিছু হল আর নাও খুলতে পারে। আর এরমধ্যেও যদি প্রতীক্ষিত নতুন সিনেমাগুলো ডিজিটাল প্লাটফর্মমুখি হতে শুরু করে, তবে দেশে সিনেমা হলের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আর এরজন্যই প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে জড়িতদের মত, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে যতো দ্রুত সম্ভব দেশের সিনেমা হলগুলো চালু করে দেয়া।
সিনেমা হল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ আছে কিনা, জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় চলচ্চিত্রের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর সঙ্গে। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান:
সিনেমা হল খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে?
এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
হল খুলে দিতে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির পক্ষে কোনো চাপ আছে কিনা?
আমরা সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। ইতোমধ্যে দুটি চিঠি পাঠিয়েছি। সেই চিঠি ফরোয়ার্ড করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রী পরিষদে পাঠিয়েছেন বাণিজ্য সচীব। মন্ত্রী পরিষদে সিনেমা হল খোলা বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখন পর্যন্ত। আমরা সে দিকেই তাকিয়ে আছি।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে আপনাদের বিকল্প কোনো পরিকল্পনা বা পরামর্শ আছে?
সিনেমা হলের বিকল্প কখনোই ডিজিটাল প্লাটফর্ম না। তবে এখন কিছু কিছু প্রযোজক হয়তো এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাও সেটা অর্থনৈতিক চাপে পড়ে। তিনি যে টাকা লগ্নি করে গত ৫-৬ মাস ধরে বসে আছেন, সেখান থেকে তো কোনো অর্থ রিটার্ন আসছে না। এই অর্থ সংকটের চাপের কারণেই হয়তো ডিজিটাল প্লাটফর্মে নির্মিত সিনেমাটি মুক্তির চিন্তা ভাবনা করছেন, হয়তো কেউ দুয়েকটা ইতোমধ্যে রিলিজ করেও থাকতে পারেন। তবে এটা নিতান্তই অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই! মানে দীর্ঘদিন টাকা লগ্নি করে বসে থাকা যে কারো জন্যই বিরাট ক্ষতির। হয়তো যারা অনলাইন প্লাটফর্মে যাচ্ছেন, তারা সেই ক্ষতিটা আর বাড়াতে চাচ্ছেন না।
আগে থেকেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছিলো যে, ২০২০ বাংলা সিনেমার জন্য দারুণ বছর হতে যাচ্ছে। বেশকিছু বিগ বাজেট ও দারুণ ছবির তালিকাও রয়েছে তাতে। এসব ছবির প্রযোজকদের আপনারা আস্বস্ত করছেন কীভাবে?
আমরা আস্বস্ত আর কীভাবে করবো! সবাই জানেন, দেখছেন- করোনার শুরু থেকেই আমরা সরকারের কাছে বলে আসছি যে চলচ্চিত্রের সবাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। বলে আসছি চলচ্চিত্রের সবাই আমরা বিরাট হুমকির মুখে, সরকারের সহায়তা চাচ্ছি, আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে আসছি। চলচ্চিত্রের ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য কিছু করার সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু এখনও সরকারের দিক থেকে আমরা কোনো সাড়া পাচ্ছি না।