সিনেমা মানে নারীর গ্ল্যামার পুঁজি করা নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘উইমেন ইন সিনেমা’ শীর্ষক এক সেমিনারের উদ্বোধনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। এতে তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকাই চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে যখন বিশ্বের খ্যাতনামা সব চলচ্চিত্র আসরে সুনাম কুড়াচ্ছে, তখন নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিকাশের পথে এখনো নানা বাধাবিপত্তি রয়ে গেছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিনেমা মানে নারীর গ্ল্যামার নয়। এ ধারণার পরিবর্তন ধীরে হলেও বদলাতে শুরু করেছে।’ ঢাকাই সিনেমায় নারীর গ্ল্যামারকে পুঁজি করে সিনেমা নির্মাণের রীতির কঠোর সমালোচনাও করে তারানা হালিম আরো বলেন, ‘ভাগ্যিস, ক’জন পরিচালক এই চিরায়ত নীতি থেকে বের হয়ে এসে নারীর মেধা আর অভিনয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছেন। তারা নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর বিচার চাইবার অধিকারের গল্পগুলো চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঢাকাই চলচ্চিত্রে নারী নির্মাতা, নারী প্রযোজকদের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। কিন্তু পুরুষ নির্মাতাদের তুলনায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম। তাদের বিকাশের পথে এখনো অনেক বাধা রয়ে গেছে। তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।”
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র বিকাশে নানামুখী পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় আরো বেশি নারী যেন সম্পৃক্ত হতে পারেন, সেজন্য আমাদের আরো অনেক পদক্ষেপ নেওয়া বাকি।”
‘এখনই সময়’ কিংবা ‘সাহেব’ এর মত চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী নারী নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হলে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নারীর ব্যথা-বেদনার কথা যেমন বলতে হবে, তেমনিভাবে নারীর নানা সংগ্রাম-সাফল্যের কথাও বলতে হবে।”
রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক নানা কাঠামোতে নারীর সাম্যতা নিশ্চিতের মতো চলচ্চিত্রাঙ্গনের নারী-পুরুষের সমতা বিধানে তথ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, “সমাজের অন্য ক্ষেত্রে নারীর যখন এগিয়ে চলেছে, তখন চলচ্চিত্রে কেন নারীরা পিছিয়ে থাকবে। এটা সত্যি এখন এক সিরিয়াস ইস্যু! ”
অনুষ্ঠানের অতিথি তুরস্কের চলচ্চিত্র সমালোচক এবং সাংবাদিকত্ব এলিন তাসকিয়ান বলেন, চলচ্চিত্র তার শুরু থেকেই নারী নির্মাতার সমতার দাবীর আন্দোলন দেখে আসছে। কিন্তু ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার ফল খুব একটা মেলেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে নারীর শরীর এবং গ্ল্যামার চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।র শরীর, গ্ল্যামার প্রচণ্ড বাজেভাবে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১২০ বছর ধরে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। নির্মম হলেও সত্য আজও পুরুষের ভাবনার আয়নাতে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র। যেন চলচ্চিত্র কেবল পুরুষের জন্য, পুরুষের তরে।
হলিউডের যৌন নিপীড়ণ বিরোধী ‘ #মি টু’ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত এই চলচ্চিত্র সমালোচক বলেন, “নারী নির্মাতাদের প্রকল্পগুলো এখনো পুরুষের বিশ্বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচ্য। এমনকি ঐতিহাসিকরাও ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্রে নারীর অবদানকে অস্বীকার করে আসছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ব্রুনো প্লাস।