দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক কাজী হায়াৎ। তার হাত ধরে লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান,ধর, কষ্ট এবং ইতিহাসের মতো তুমুল ব্যবসাসফল ছবির দেখা পেয়েছে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। অথচ এই সময়ে এসে বিগত কয়েক বছর ধরে দাপুটে এই নির্মাতার হাতেও নেই ব্যবসাসফল কোনো চলচ্চিত্র। নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ করলেও প্রেক্ষাগৃহ দর্শক শুণ্য। চলচ্চিত্রের এই নাকাল অবস্থা, দর্শক খরা এবং করণীয় জানতে চেয়েই এই নির্মাতার কাছে চ্যানেল আই অনলাইনের ফোন…
হ্যালো। হায়াৎ ভাই, কেমন আছেন?
ভালো আছি।
আপনার সঙ্গে এই সময়ের সিনেমার হালচাল নিয়ে একটু কথা বলি…
জ্বী, বলুন…
গেল বছরেতো আপনি একাধিক সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শাপলা মিডিয়ার একটি ছবিও নির্মাণের কথা ছিলো। কী খবর এগুলোর?
শাপলা মিডিয়ার একটি ছবিতে সাইন করেছিলাম। কিন্তু এরপরে এই বিষয়ে প্রযোজক আমার সাথে কোনো কথা বলেনি।
তারমানে শাপলা মিডিয়ার সিনেমা আর করছেন না?
আসলে তারা এখন তিনটা সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। এরমধ্যে তাদের ‘আমি নেতা হবো’ ছবিটি সেন্সর হয়ে গেছে। এছাড়া চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্যা মাইয়া এবং আরেকটা কলকাতার শ্রাবন্তীর সাথে একটা ছবি করছে। তিনটা ছবিই উত্তম আকাশ পরিচালনা করছে। আমার মনে হয় এই তিনটা ছবির ব্যস্ততার পর আমার ছবিটা হতে পারে। আর আইঅ্যাম নট সো মাচ ক্রেজি টু মেইক ফিল্ম নাউ?
কেনো ভাই,নির্মাতার হতাশ কণ্ঠতো আশঙ্কায় ফেলে দেয়?
আসলে সিনেমা এখন চলে না। শুধু শুধু অপরের অর্থ ধ্বংস করার কোনো অধিকার আমার নাই।
কিন্তু চলচ্চিত্রের এই সংকটকালে আপনাদের মতো নির্মাতাদের এমন ভাবনা কি চলচ্চিত্রকে আরো সংকটে ফেলবে না?
না না। আমাদের মতো পরিচালকের কোনো কথা না এখানে, দর্শকতো সিনেমাই দেখে না।
এই সংকট উত্তরণের পথ কী তাহলে? আপনি কী মনে করছেন?
একটা কথা বলি, মনে কিছু করিয়েন না। এ দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। এখানে সিনেমা শিল্প ছিলো এটাইতো অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার। এদেশে হিজাব পরা লোক অনেক বেশি। এখন ধর্মীয় আনুগত্যটাও অনেক বেশি। সিনেমা দেখাকে অনেকে পাপ মনে করে। তো যে দেশে সিনেমা দেখাকে মানুষ পাপ মনে করে সেখানে হল ভর্তি দর্শক কীভাবে আশা করি! এটা হলো প্রথম ও প্রধান কারণ।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে: এদেশে সিনেমা দেখার পরিবেশ নাই। ভালো সিনেমা হল দিতে পারে না।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে: সিনেমার মতো সিনেমা এখন আর হচ্ছে না। দ্যাটস ইট।
এইসব সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। ঠিকাছে? আমি অন্তত দেখি না। অন্যকেউ দেখলে দেখতেও পারে। ওরা হয়তো ইন্টারভিউয়ের খাতিরে বলতে পারে। টকশোতে বাংলা সিনেমার জন্য সুদিন আসছে, আলো দেখতে পায় অনেকে। কিন্তু আমি সিনেমায় আলো দেখতে পাই না। অন্ধকার দেখতে পাই। সিনেমা শিল্প অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
আপনার তিনটা কারণের প্রথমটা নিয়ে বলি, আপনি বললেন সিনেমা দেখাকে মানুষ পাপ মনে করে বলেই এখন মানুষ সিনেমা দেখে না। আসলেই কি তাই? সিনেমার স্বর্ণযুগ বলা হয় আপনাদের সময়টাকে। সেসময়তো নাকি মানুষে হলভর্তি থাকতো। তখন কি ধর্ম ছিলো না মানুষের?
ধর্ম ছিলো, কিন্তু ধর্মীয় আনুগত্যটা এতো বেশি ছিলো না। এবং সোশাল সিকিউরিটি ছিলো মানুষের। এখন মানুষের সোশাল সিকিউরিটি নাই। আর মানুষ যখন ইনসিকিউরিটিতে ভুগে তখন মানুষের ধর্মীয় আনুগত্যটা বেড়ে যায়। আমার কথাগুলো অন্যভাবে নিবেন না, আমি খুব স্পষ্টবাদী একজন মানুষ।
না না, অন্যভাবে নিচ্ছি না। আপনার দিক থেকে যুক্তিগুলো নোটেবল…!
আজকে রাখি, আমার একটু কাজ আছে…
ঠিকাছে, ভালো থাকবেন…
তিনি ফোন রেখে দিলেন।