চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিনেমা বানাতে শুধু টাকা নয়, বুকের পাটাও লাগে: জীবন

‘‘সিনেমা বানানো হয় মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য। যে কোনো মাধ্যম দিয়ে গেলেই হলো। সিনেমা হলের দরকার কী?’’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টিমের সদস্য হিসেবে অফিসিয়ালি মিডিয়ায় যাত্রা শুরু শরাফ আহমেদ জীবনের। তার আগে তিনি খুঁজতেন কীভাবে মিডিয়াতে কাজ করা যায়। তবে সুযোগটা আসে ২০০২ সালের ৫ মে। ওইদিন থেকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে কাজ শুরু করেন। নির্মাতা হতে চেয়েছিলেন। বেশকিছু জনপ্রিয় টিভিসি, নাটক নির্মাণ করেছেন জীবন। সঙ্গে যোগ হয়েছে, অভিনেতা পরিচয়! সর্বশেষ কাজল আরেফিন অমি’র ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে বোরহান ভাই চরিত্রের জন্য ইদানিং তিনি আলোচিত জীবন। ক্যারিয়ারের গ্রাফ নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনে সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছেন শরাফ আহমেদ জীবন-

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে কাজ শুরু, এটা সবাই জানে। কিন্তু তার সংস্পর্শে এলেন কীভাবে?
২০০২ সালের আগে প্রায় একবছর তার সঙ্গে ফোনে আলাপ করতাম। রীতিমত বিরক্ত করতাম। বলতাম, আমাকে আপনার সঙ্গে নিতেই হবে! সরয়ার ভাই বলতেন, তুমি তো ছোটমানুষ। গোঁফ দাঁড়ি ওঠে নাই। তুমি কীভাবে পারবে! অভিনয় নাকি ইউনিটে কাজ করতে চাও? আমি ইউনিটে কাজ করতে চাইতাম। সরয়ার ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল আজিজ সুপার মার্কেটে। তখন বলেছিলান, ভাই আমি সেই জীবন যে আপনাকে বিরক্ত করি। উনি বলেছিলেন, কেন কাজ করতে চাও? বলেছিলাম, আমি অনেক ক্রিয়েটিভ। মনে হয় আমি করতে পারবো। তাছাড়া আপনি যে কাজ করেন আমার কাছে মনে হয় কাজগুলো অনেক সহজ। তখন ফারুকী ভাইয়ের হিট কাজ হয়েছিল চ্যানেল আইয়ের ‘চড়ুইভাতি’। তখনতার ‘একান্নবর্তী’র শুটিংয়ে আমাকে যেতে বলেছিলেন ঠিকানা দিয়ে। সেখানে পৌঁছানো ছিল আরেক মজার ঘটনা। আমাকে দেয়া হয় মহাখালী ডিওএইচএস এর ঠিকানা, আমি চলে যাই ধানমন্ডি ১৭ নাম্বার রোডের ২৩৬ নাম্বার বাড়ির খোঁজে। কিন্তু সেখানে এই ঠিকানায় বাড়ি ছিল না। পরে খুঁজে খুঁজে বিকেলে মহাখালী ডিওএইচএস এর ঠিকানায় যাই। এই দিনটা ছিল ২০০২ সালের ৫ মে। সেদিন থেকে সরয়ার ভাইয়ের সংস্পর্শ পাই।

ফারকীর টিম থেকে বের হওয়ার পর পথচলা কেমন ছিল?
তখন মাথায় স্বপ্ন ছিল বিভিন্ন ধরনের গল্প বলার। মানুষের জন্য গল্প বলে তাদের কাছে যাবো এটাই চাইতাম। ২০০৭-০৮ সালটা আমার জন্য পিক সময় ছিল। তখন আমার বেশ কিছু ভালো প্রোডাকশন হয়। এরমধ্যে ছিল শেখ আবদুর রহমানের আত্মজীবনী, প্রিয় পারভিন, সিরিয়াস একটা কথা আছে, সিরিয়াস কথার পরের কথা, হাওয়াই মিঠাই, চৌধুরী সাহেবের ফ্রি অফার, কয়েদীসহ অনেকগুলো কাজ হিট হয়েছিল। এখন ভিউ এবং হাসানোর প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু আমাদের ইনটেনশন ছিল শুধুই মানুষের গল্প বলবো। কত ভিউ হলো, মানুষ কীভাবে নিল এটা মোটেও আমাদের ইনটেনশন ছিল না।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কি শুধুই পরিচালক হতে?না না। আমার উদ্দেশ্য ছিল সার্ভাইভ করা। লেখাপড়া করা এবং একটা থাকার জায়গা নিশ্চিত করা। মিডিয়াতে কাজের ইচ্ছে ছিল তবে মূল উদ্দেশ্য ছিল লেখাপড়া আর সার্ভাইভ। মফঃস্বলে বড় হয়েছি। তখনই বুঝেছিলাম ঢাকা যেহেতু কেন্দ্র তাই এখানে আসতেই হবে।

পরিচালকের চেয়ে অভিনেতা হিসেবেই আপনি পরিচিতি পাচ্ছেন। নিজের কাছে কেমন লাগে?
এটা আমার একেবারে ভিতরের কথা। আমি অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি চাই না। কাজ করছি বলেই হয়তো মানুষ চিনছে। মন থেকে চাই, ক্যামেরার পিছন থেকে পরিচালক হিসেবে যে কাজগুলো করছি ওই পরিচয়টা মানুষ জানুক। তবে হ্যাঁ, আমি পরিচালক হিসেবে হয়তো এখনও মাইলফলক কাজ সেভাবে করতে পারিনি। নাটকে যেভাবে পরিচয় তুলে ধরা যায় বিজ্ঞাপনে কাজ করলে সেই সুযোগ থাকে না। আমি নাটকে কাজ করতে করতেই বিজ্ঞাপন বানানো শুরু করি।

ছেলের সাথে জীবন…

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ এর বোরহান ভাই চরিত্র দিয়ে নতুন করে আপনি জনপ্রিয় পেয়েছেন। এমনটা অনুভব করেন?
নাটক বিজ্ঞাপন বানানোর জন্য সীমাবদ্ধ মানুষের কাছে আমার পরিচয় ছিল। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটক করার পর দর্শক মনে করে পরিচালক অমি আমাকে নতুনভাবে নিয়ে আসছেন। রাস্তাঘাটে মানুষ আমাকে এখন ‘বোরহান ভাই’ বলে ডাকেন। এখানে আমার চেয়ে ক্রেডিট বেশি পরিচালক অমির। তাকে আগেই বলেছিলেন, অমি এমন দুর্দান্ত হিট সিরিয়ালে আমাকে নিচ্ছে বুইঝো আমার জন্য যেন সিরিয়ালের ইমেজ নষ্ট না হয়। সে শুধু বলেছিল, তার উপর ছেড়ে দিতে। পরিচালক অমি আমার চরিত্রটা এমনভাবে পোট্রে করছে যে মানুষ আসল নামটা ভুলে বোরহান ভাই হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এ নাটকের জন্য ফেসবুকে প্রচুর খুদেবার্তা পাই। তবে আমার কাছে বিষয়গুলো বেশ উপভোগ্যের লাগে।

‘ফিমেল’ নাটকের একটি দৃশ্যে শরাফ আহমেদ জীবন

‘ফিমেল’ নাটকে আপনার কমিশনার চরিত্রটিও বেশ আলোচিত হয়েছে, এটার প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন?  
ব্যাচেলর পয়েন্ট টিমের সঙ্গেই আমার ‘ফিমেল’ নাটকটি করা। এতে কমিশনার চরিত্র করি। যিনি এলাকায় ভীষণ জনপ্রিয় কিন্তু ভেতরটা প্রেমিক পুরুষ। তার মধ্যে আড্ডা, মহল্লা, চাইল্ডিশ ব্যাপার রয়েছে। কাজটি প্রচারের পর অনুভব করলাম মানুষ যে এতো গ্রহণ করবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। বোরহান ভাইয়ের পাশাপাশি কমিশনার চরিত্র দুটোই দর্শক গ্রহণ করেছেন। গতকাল বসের (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) শুটিং করছিলাম। সেখানেও মানুষ এসে আমার সঙ্গে ছবি তোলার পর জানিয়েছে বোরহান ভাইয়ের মতো কমিশনার চরিত্রটিও দুর্দান্ত হয়েছে। অবশ্যই এই কৃতিত্ব পরিচালক অমির।

প্রত্যেক নির্মাতার স্বপ্ন থাকে সিনেমা বানানোর। সিনেমা নির্মাণ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই?
গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, ধৈর্য্যই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রার্থনা। আমিও এটা মানি। সবসময় ধৈর্য্য ধরে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু সিনেমার ব্যাপারে আমি ভীষণ ডেসপারেট। এটা বানাতেই হবে। এই যে হল নাই, চালানোর জায়গা নাই শুনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ভালো সিনেমা বানাতে পারলে মানুষ খুঁজে খুঁজে দেখবে। কে বানিয়েছে এটা দেখবে না। আমার ওস্তাদ সরয়ার ফারুকী, গাউসুল আলম শাওন ভাই, তানভীর হোসেন, আনিসুল হক এই মানুষগুলো আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সবকিছু নিয়ে আমি তাদের পরামর্শ নেই। তাদের সঙ্গেও আলাপ করেছি। দুই তিনটা গল্প নিয়ে গত দুই বছর নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের ‘রক্ত গোলাপ’ নামের একটি অসাধারণ উপন্যাস নিয়ে আগাচ্ছি। আরও একটা গল্পের চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। হুমায়ূন আহমেদের পর বাংলাদেশে চিত্রনাট্য লেখায় যদি কারও নাম বলতে হয় আমি আনিসুল হকের কথা বলবো। তার আরও বেশি চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করা উচিত। তবে আমি এই বছরই সিনেমা বানাবো। অর্থের যোগানে যে পরিকল্পনা রয়েছে তা যদি না হয়, তবে গল্প বলবো এক জায়গায়। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য সিনেমা রয়েছে। কারণ, আমি সিনেমা বানানোর ব্যাপারে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। নিয়ামুল মুক্তা ‘কাঠবিড়ালি’ বানিয়েছে নিজ উদ্যোগে। আমি ওর এই বিষয়টা ভীষণভাবে এপ্রিসিয়েট করি। আমি তার অনেক সিনিয়র কিন্তু আমি এখনও বানাতে পারিনি। মুক্তা তার পরের সিনেমার কাজ করছে। সিনেমা বানাতে শুধু টাকা লাগে না, বুকের পাটা লাগে- এটা নিয়ামুল মুক্তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমার ধারণা ‘কাঠবিড়ালি’তে যে গল্প মুক্তা বলেছে সেই গল্পটা ওকে ঘুমাইতে দিত না, অস্থির করতে তুলতো। ভিতরে ভিতরে এই অস্থিরতা সব নির্মাতাদের মধ্যে আসা উচিত। দেশে টাকাওয়ালা মানুষের অভাব নেই। সিনেমা হিট হলে প্রযোজক নিয়ে পারা যাবে না।

দেশে কতোগুলো সিনেমা হল আঙুল গুনে বলা যায়। নতুন যারা সিনেমা বানাতে চান তাদের জন্য এটিতো সত্যিই শঙ্কার…
নেটফ্লিক্স, অ্যামাজান প্রাইমসহ বড় বড় ওটিটি রয়েছে। মেক্সিকান ‘রোমা’ নেটফ্লিক্সের সিনেমা। যেটি বড় বড় অ্যাওয়ার্ড পাওয়া। মানুষের হাতে হাতেই তো এখন সিনেমা হল। সিনেমা বানানো হয় মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য। যে কোনো মাধ্যম দিয়ে গেলেই হলো। সিনেমা হলের দরকার কী? সিনেমা দেখানোর মাধ্যমের অভাব নেই।