চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সিনেমায় রকিবুল হাসানের জীবনী, অনুমতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত নির্মাতা

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নেমে সবাই যখন নিজেদের ব্যাটের মধ্যে আইয়ুব খানের নির্বাচনী প্রতীক ‘তলোয়ার চিহ্ন’ লাগিয়ে মাঠে নামেন, তখন নিজের ব্যাটের মধ্যে পাকিস্তানি শোষকের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নামেন দুর্দান্ত সাহসী এক বাঙালি তরুণ। যে ঘটনা সেদিন চমকে দিয়েছিলো পুরো দুনিয়া। এমন প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ঘটনা পরদিন শিরোনাম হয়েছিলো বিশ্বমিডিয়ায়। সেই সাহসী তরুণের নাম রকিবুল হাসান।

কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার, মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বহু বছর পরে হলেও এবার নির্মিত হতে যাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যার কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবিটি পরিচালনা করছেন নির্মাতা বান্টি আফজাল।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে রবিবার দুপুরে বান্টি আফজাল জানান, বহুদিন থেকেই কিংবদন্তি রকিবুল হাসানকে নিয়ে সিনেমা করার পরিকল্পনা করছি আমরা। বছর খানেক ধরে তাকে নিয়ে রিসার্চ করছি। চলতি বছরের শুরুর দিকেই সব মোটামুটি ঠিকঠাক ছিলো, কিন্তু করোনার কারণে আমরা লিখিত চুক্তি করতে পারিনি। অবশেষে চলচ্চিত্রটির জন্য রকিবুল হাসানের সঙ্গে আমাদের লিখিত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, রকিবুল হাসান আমাদের কিংবদন্তি। তিনি আমাদের জাতীয় বীর। তাকে নিয়ে আগে কেন উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ হয়নি, বিষয়টি আমাকে বহু ভাবিয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই এমন কিংবদন্তিকে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করি। এরজন্য চলচ্চিত্রের কাহিনিকার দেবু দা (দেবব্রত মুখোপাধ্যায়) এবং আমার প্রযোজনা সংস্থা হাফপ্যান্ট সিনেমা ফ্যাক্টরির রুমানা শারমিনের প্রতি কৃতজ্ঞ।

জীবনী নির্ভর এই ছবিতে রকিবুল হাসানের কোন সময়টাকে তুলে ধরবেন? এমন প্রশ্নে বান্টি জানান, ছবিটি মূলত স্পোর্টস কেন্দ্রিক। তার খেলোয়ার সময়কাল, সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন ফ্রন্টলাইন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও তার কিছু দুর্দান্ত সাহসী পদক্ষেপ আছে, যেগুলো আমরা নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। মূলত ষাটের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের কিছু সময় পর পর্যন্ত হবে এই চলচ্চিত্রের ব্যাপ্তী। তার যে বৈচিত্রময় জীবন, তার পুরোটাতো আসলে একটা সিনেমায় দেখানো সম্ভব না।

চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, এটা যখন প্রথম তাকে জানান কেমন ছিলো অভিব্যক্তি? জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা আমাদের জীবনে! বিশেষত আমার মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছিলো যে, চলচ্চিত্রের জন্য তিনি আদৌ রাজি হবেন কিনা! উনার সঙ্গে প্রথমবার কথা বলার পর দেখি, এতো অমায়িক মানুষ! পরে যখন উনাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিস্তারিত পরিকল্পনা বললাম, শুনে স্বানন্দ্যে তিনি রাজি হলেন। উল্টো উনি আমাকে কিছু বিষয়ে সাজেশন দিয়েছেন। শুধু তাই না, উনি এমন অজানা সব গল্পও আমাদের সাথে করেছেন যা কোনো লেখায় কিংবা কারো আর্টিকেলেও আমরা পাইনি। যে ঘটনাগুলো চলচ্চিত্রে আমরা রাখতে যাচ্ছি। প্রথম বৈঠকের পর থেকে এখনও তিনি আমাদের খুব দারুণভাবে সহায়তা করছেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট তৃপ্তির।

হাফপ্যান্ট সিনেমা ফ্যাক্টরির প্রযোজনায় ছবিটি হতে যাচ্ছে বিগ বাজেটের। এমনটাই জানান বান্টি আফজাল।

চলচ্চিত্রটির জন্য লিখিত চুক্তি সই করছেন রকিবুল হাসান ও প্রযোজক রুমানা শারমিন

চলচ্চিত্রটির নাম জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, রকিবুল হাসানকে নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটির নাম ঠিক করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে নামটি বলতে চাইছি না, কারণ আগে নামটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে শিগগির চলচ্চিত্রটির নাম সকলে জানতে পারবেন।

কাস্টিং নিয়ে জানতে চাইলে নির্মাতা জানান, কাস্টিং নিয়ে এখনো আমরা প্ল্যান করিনি। তবে রকিবুল হাসানের চরিত্রে এমন একজনকে আমরা কাস্টিং করতে চাই, যিনি একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলা এবং অভিনয়টা দারুণ জানেন। আসলে আমরা এই চরিত্রের জন্য নতুন কাউকেই খুঁজছি।