চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিনেমাকে প্রতিদিনের বিষয় হিসেবে ভাবতে চাই: মেহেদী হাসান

৭১তম লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভাল: ১ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট

১ আগস্ট শুরু হচ্ছে বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আর এই উৎসবের ‘ওপেন ডোরস’-এর ‘নন-কম্পিটেটিভ’ বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে মোট ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ১৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে দেখানো হবে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সাদ পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির নাম ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে মেহেদী হাসান পরিচালিত ‘ডেথ অব অ্যা রিডার’ এবং অং রাখাইন পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট পোস্ট অফিস’।

এরমধ্যে ‘ডেথ অব অ্যা রিডার’ বা ‘পাঠকের মৃত্যু’– নির্মাতা মেহেদী হাসান তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ২০১৭ সালে। লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে স্ক্রিনিং উপলক্ষ্যে এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতা মেহেদী হাসান:

‘ডেথ অব অ্যা রিডার’ কিংবা পাঠকের মৃত্যু এবার Open Doors Screenings section-এ নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন। এর আগে আর কোন আন্তর্জাতিক ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি?
ধন্যবাদ! ২০১৭’র একাদেশমা আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল, নেপালে।

 পাঠকের মৃত্যু- ইমেজের খেলা। প্রথমত জানতে চাই নির্মাতা এই সমস্ত ইমেজ জড়ো করেছিলেন কোন ভাবনা থেকে?
আমি সিনেমাকে প্রতিদিনের বিষয় হিসেবে ভাবতে চাই। সবকিছু নিয়ে যেমন কবিতা হয়, সবকিছু নিয়ে সিনেমাও হয়। ঐ সময়টায় আমি কোনভাবেই বই পড়তে পারছিলাম না, মনোযোগ দিতে পারছিলাম না আসলে। ভাবলাম এটা নিয়েই একটা সিনেমা হোক। এটা হোক একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এক ধরনের কনফেশান।

আর এখানে শুধু ইমেজের খেলা ছিল বললে সাউন্ডের খেলাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শব্দ বহু সময়ই এখানে ইমেজকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

পুঁজিবাদ দেখালেই কিছু সিম্বল নির্দিষ্ট ভাবে দেখাই আমরা, যেমন- কোকাকোলা। কোকাকোলা কেন দেখিয়ে যাই আমরা?
পুঁজিবাদ ঠিক সচেতন ভাবে এখানে ছিল বলে মনে হয় না। আমার মনে হয়েছে যেটা যেখানে থাকার কথা সেটা সেখানে নেই। যেখানে পানি থাকার কথা সেখানে যেমন কোকাকোলা থাকার কথা নয়। পুঁজিবাদ অথবা পোস্ট পুঁজিবাদের এটা হয়তো ফলাফল। এটা আমাকে ডিসট্র্যাক্ট করছিল।

কোকাকোলা এখানে দৈনন্দিকতা থেকে এসে থাকবে, মনে হয় এবং ক্লিশে তো বটেই।

একের পর এক ইমেজের মাঝে মানুষের ভাবনার জন্য বিরতি দেওয়া নিয়ে নির্মাতা কি ভাবতে চেয়েছিলেন ‘পাঠকের মৃত্য’ তে?
এটা একটা ডিসট্র্যাক্ট, এলোমেলো এবং ভঙ্গুর ভাবনার প্রকাশ। যার মধ্যে আবার এক ধরনের হারমোনি খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। যিনি দেখছেন তার অবচেতনে এই ইমেজ আর শব্দ কোথাও গিয়ে কড়া নাড়ে। এটা অনেকটা সেই পেইন্টিং-এর মতো যার সমস্তটা জুড়ে রঙের বিশৃঙ্খলা কিন্তু কোথাও একটা ঐক্য আছে।

আপনি নগরের। নির্মাতা হিসেবেও, ইমেজে নগর এর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়তো জাগে না তাই আপনার। কিন্তু পাঠককেও নাগরিক করে রাখলেন কেন? বই – তো নগরের বাইরের ইমেজও দেখায়, না কি?
নগরের বাইরে নিশ্চয় ইমেজ আছে, শব্দ আছে। আমি সেটাকে প্রকৃতি বলতে চাই, নৈঃশব্দ বলতে চাই। কিন্তু প্রকৃতি আমাকে ডিসট্র্যাক্ট করে না। তাই হয়তো নগরের বাইরে যাওয়া হয়নি।

যে যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধের ইমেজ বিশ্ব চিনে সেই ইমেজই দেখানোর সাথে কি ফিল্মের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার কথা চলে আসে?
সব ভৌগলিক সীমারেখা, ভেদাভেদ একই রকম। এইসব সীমানাই যুদ্ধ-সংঘাতকে উসকে দেয়। যুদ্ধের চরিত্রটাও তাই একই রকম। সবসময়ই সব ধরনের বাউন্ডারিকে অস্বীকার করি। এতে ফিল্মের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আসে কিনা জানা নাই।

‘পাঠকের মৃত্যু’ বলার মধ্য দিয়ে আমরা জেনারেলি যে ধারণা পোষণ করি, আপনার সিনেমা কি সেই জেনারেল ধারণাকেই ওউন করে কিনা? নাকি অন্য অর্থ?
বই পড়তে না পারার কারণ থেকে যদিও এর শুরু, তবু এর বাইরের কিছু বিষয়ের সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। যেটা পাঠকের মৃত্যুর সাথে সাথে আরো সব ধ্বংসকেও ঈঙ্গিত করে।

আর যে বইটা আমি এই সিনেমায় ব্যবহার করেছি সেটা চলচ্চিত্র নির্মাতা পেদ্রো কস্তা ‘র স্ক্র্যাপবুক ‘কাসা দে লাভা’। যেটা একই সঙ্গে বই, আবার তার চাইতে বেশী কিছু।

‘এবার লোকার্নো ওপেন ডোরস’-এ বাংলাদেশের আরও দু’টো চলচ্চিত্র যাচ্ছে, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ এবং ‘দ্য লাস্ট পোস্ট অফিস’। এ দু’টো চলচ্চিত্র নিয়ে বলুন…
‘দ্য লাস্ট পোস্ট অফিস’-এর একটা ভার্সন আমি দেখেছি। সুন্দর সিনেমা। আর ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ দেখার অপেক্ষায় আছি, লোকার্নোতে।