পুলিশের টিয়ারশেলে চোখ হারানো সিদ্দিকুরকে একটি চোখ দিতে চান কলেজ ছাত্র জাহাঙ্গীর কবীর। জাহাঙ্গীর কবীর রাজধানীর মোহাম্মদপুর আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর।
চ্যানেল আই অনলাইনকে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘সিদ্দিকুরের অবস্থানে নিজেকে চিন্তা করলে দিশেহারা হয়ে যাই। যদি অন্ধই হয়ে যায় সে, তাহলে কিভাবে কাটবে বাকি জীবন!’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য এই কথা শুধু লোকমুখে শুনে এসেছি। এখন কাউকে দামি কথাটার বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় না। একজন মানুষ কয়েকদিন আগেও সুন্দর এই পৃথিবী দেখতেন। মায়ের মুখ দেখতেন। তার বাকি জীবন কাটবে অন্ধকার দেখে। তা হতে পারে না। আমার দুইটা চোখ সুস্থ। সেখান থেকে একটা সিদ্দিকুরকে দিয়ে দিতে চাই।’
একটা চোখ দিলে তার নিজের জন্যও পৃথিবীটা কঠিন হয়ে যাবে সেটা জানেন জাহাঙ্গীর কবীর। তারপরও দিতে চান চোখ। নিয়েছেন নিজ পরিবারের সম্মতি। ‘পৃথিবীর সব কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই দেব। আমার পরিবারকে যখন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি তারা অবাক হয়েছে। যখন বুঝিয়েছি, মানতে কষ্ট হলেও তারা অমত করেনি’, বলছিলেন জাহাঙ্গীর কবীর।
জাহাঙ্গীর কবীর একদিন তিনঘণ্টা একচোখ বন্ধ করে কাজ করেছেন।কষ্ট হলেও চোখ একচোখে কাজ করা অসম্ভব না। তবে দুই চোখ না থাকলে কাজ করা অসম্ভব। দুই চোখ বন্ধ করে কাজের চেষ্টা করতে গেলে পৃথিবীটাই অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর মনে হয়েছে জাহাঙ্গীর কবীরের কাছে। সিদ্দিকুরের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতেই এমনটা বলেছেন।
তিনি প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন, যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে যেন তার একটি চোখ অথবা কর্নিয়া নিয়ে সিদ্দিকুরের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়।
সিদ্দিকুরের সহপাঠী ও হাসপাতালের সার্বক্ষণিক সহযোগী ফরিদুল ইসলাম জানান, ‘সিদ্দিকুর বাম চোখের নিচের অংশ দিয়ে একটু দেখতে পান বলে । এটা জানার পর ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় নিয়েছেন। সিদ্দিকুরের বাম চোখটি ভালো হওয়ার দশভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চোখ কিংবা কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের কোনো সুযোগ বা পদ্ধতি এখনো প্রচলিত নেই বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটের ডাক্তার জাহিদ আহসান সিদ্দিকুরের চিকিৎসা করছেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন ‘জাহাঙ্গীর কবীরসহ অনেকেই সিদ্দিকুরকে চোখ দিতে চাইছেন। এটা খুবই ভালো দিক।তবে সিদ্দিকুরের চোখের যে অবস্থা তাতে প্রতিস্থাপনের সুযোগ নেই। তার চোখসহ চোখের ভেতরের নার্ভও ড্যামেজ হয়ে গেছে। শুধু মাত্র কর্নিয়া সমস্যা হলে সেটা পালটানো যেত। কিন্তু টোটাল আইবল চেঞ্জ করার মতো কোনো পদ্ধতি চক্ষু বিজ্ঞানে এখনো প্রচলন হয়নি।’