গ্রেপ্তার হওয়া রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব এই অভিযান শুরু করে।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাহেদকে নিয়ে র্যাব দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে ওই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। তখন তিনি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরা ছিলেন। এর আগে ১২ টা ১৫ মিনিটে ওই ভবনে র্যাবের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম প্রবেশ করেন।
র্যাব সূত্র জানায়, সাহেদকে নিয়ে এই ভবনের ৪(এ) নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে ফ্ল্যাটটি সাহেদের নিজস্ব কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভবনটি বুধবার সকাল থেকে ঘিরে রাখে র্যাব। ঘিরে রাখার বিষয়ে ভবনের নিচে অবস্থান করা র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটা তথ্যের ভিত্তিতে এখানে (উত্তরা) এসেছি, তথ্য যাচাই করে বিস্তারিত বলতে পারব। আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনাদের জানানো হবে।
এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তাকে ঢাকায় র্যাবের সদর দফতরে নেয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদ করা হয়।
সাতক্ষীরা থেকে সাহেদকে বহনকারী র্যাবের হেলিকপ্টার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে র্যাবের এডিজি (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ‘সাতক্ষীরায় তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর গত রাত ২টা থেকে অভিযান শুরু করলেও ভোর ৫টা ১০ মিনিটে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। এর আগে বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে বেশ কয়েকবার সাহেদের কাছাকাছি গিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে সাহেদের কাছাকাছি কয়েকবার পৌঁছানো সম্ভব হলেও গ্রেফতার এড়াতে পেরেছেন তিনি। গত ৯ দিনের টানা চেষ্টার পর অবশেষে বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীতীর সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়’।
সাহেদের বেশ পরিবর্তনের বিষয়ে র্যাবের এডিজি কর্নেল তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘চুলের রং পরিবর্তন করে সাদা চুল কালো করেছেন তিনি। গোফ কেটে কালো করে ফেলেছেন। তার প্ল্যান ছিল মাথা ন্যাড়া করার। ভারতে গেলে হয়ত ন্যাড়া করে ফেলতেন।’
র্যাবের এডিজি বলেন, ‘সাহেদকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কাজে সহযোগিতা করছিল একজন মাঝি, সে সাঁতরে পালিয়ে গেছে। তবে সাহেদ করিম মোটা হওয়ায় হয়তো দৌড়াতে পারেননি। যার কারণে তাকে আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি। বোরকা পরা অবস্থায় নৌকায় উঠে পালিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে আমরা ধরে ফেলেছি। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে বুধবার সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখান থেকে ৮ জনকে আটকের পর র্যাবের দলটি মিরপুরে রিজেন্টের অন্য শাখায় অভিযান পরিচালনা করে।
সেসময় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করত রিজেন্ট হাসপাতাল।’
‘‘এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্টপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার করে আদায় করত তারা। এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে মোট তিন কোটি টাকার হাতিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে।’’
সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হতো বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় গত ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় আটককৃত ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাহেদসহ ৯ জনকে পলাতক আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।