‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’, ‘একাত্তরের মা জননী’,‘এখন তো সময় ভালেবাসা’ ‘আমার স্বপ্নগুলো কেনো এমন স্বপ্ন হয়’ এমনসব গান দিয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ৯০ দশকের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আগুন। অ্যালবামের চেয়ে তিনি প্লেব্যাক করেছেন বেশি। সেসময় তার বেশিরভাগ প্লেব্যাকে কণ্ঠ মেলাতেন প্রয়াত জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ্। জনপ্রিয় শিল্পী আগুন সেসব কথাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন চ্যালেন আই অনলাইনের সঙ্গে।
বর্তমানে কোন অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ততা?
আগুন: অ্যালবাম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না কারণ সকালে গানের অ্যালবাম বাজারে আসলে বিকেলে তা পাইরেসি হয়ে যায়। তাই অনলাইন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি গান পাগল মানুষদের ফ্রি গান শোনাবো। আমার টাকার দরকার না্ই, শুধু চাই দেশের মানুষ দেশের গান শুনুক।
আপনি যখন সিনেমায় গান গাওয়া শুরু করেছিলেন তখন সালমান শাহ’র জন্য বেশি গাইতেন, এর বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
আগুন: আসলে সালমান শাহ, মৌসুমী ও আমি প্রায় একইসময়ে সিনেমায় কাজ করা শুরু করেছিলাম। সালমান শাহ্ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। কেনো জানি আমার কণ্ঠের সঙ্গে ওর সিনেমার অভিব্যক্তি একদম মিলে যেতো। সেজন্যই হয়তো। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সালমান আর মৌসুমীকে সবাই চিনতো। কিন্তু আগুনকে কেউ চিনতো না।
জীবনে কষ্টের কোনো স্মৃতি আছে আপনার?
আগুন : আমি মগবাজার ক্রস করছি খালাম্মা আপাকে ফোন দিলো। কিন্তু খালাম্মা আমার সঙ্গে মজা করে সেটা আমি জানি। সে আমাকে ফোনে বললো তোর জন্য একটা খারাপ খবর আছে, আমি বললাম কী? সে বললো, সালমান শাহ্ মারা গেছে। শুনে বললাম মজা নিয়ো না ওর সঙ্গে তো কালকেও কথা হয়েছে। তবে কথা সত্যি ছিলো। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখলাম সালমানের লাশ। (অশ্রু চোখে) এরপর আমি আর কিছু বলতে পারবো না।
প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কে?
আগুন: প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আমার মা, নিলুফার ইয়াসমিন।
ছোট পর্দায় ও বড় পর্দায় সমান তালে কাজ করছেন, অভিনয় আগে থেকেই জানা ছিলো?
আগুন: না, অভিনয় কখনো শিখিনি। বাবা খান আতাউর রহমান। তার রক্ত হয়তো শরীরে বইছে তাই অভিনয়টা করতে পারি।
ঈদের জন্য নতুন কিছু করেছেন কি?
আগুন: এবারের রোজার ঈদে ‘আমি বালি’ শিরোনামে একটি নাটকে অভিনয় করেছি। এতে আমার সঙ্গে মডেল ও অভিনেত্রী মৌ কাজ করেছে।
অভিনয় তো শিখেননি তবে কার অভিনয় আপনাকে মুগ্ধ করে?
আগুন: বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রিতে রাজ্জাক চাচা, সালমান শাহ্ এবং জাফর ইকবাল এই তিন জন আমার মতে শক্তিশালী অভিনেতা। এই তিনজন ছাড়া আমি আর কাউকে দেখি না।
আগুন নাম হওয়ার পেছনের গল্পটা কি?
আগুন: আমি আসলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করি। তখন শুধু চারদিকে আগুন। বাবা চেয়েছিলো আমার নাম রাখবে পাগল । এই নাম শোনার পর মা বলেছে তুমি যদি এই নাম রাখো তাহলে তোমার সঙ্গে আমি থাকবো না। বাবা তখন সরি বলে বললো কি নাম রাখবো চারিদিকে তো খালি আগুন জ্বলছে। মা বললো এর চেয়ে ভালো নাম হতে পারে না। এরপর যথারীতি আমার নাম হয়ে গেলো আগুন।
আগুনের বড় ছেলে মিছিল ও ছোট্ট মশাল এই নামের পেছনে হয়তো কোনো গল্প রয়েছে?
আগুন: বড় ছেলে মিছিলের যেদিন জন্ম সেইদিন রাস্তায় ভয়াবহ মিছিল। তাই ওর নাম রেখে দিলাম মিছিল। মিছিলের পর আমার ছোট ছেলের জন্ম। ভাবলাম মিছিলের পর কি হতে পারে মশাল। ওদের নাম শুনে হুমায়ুন ফরীদি চাচা আমাকে বলতেন পরের টার নাম রাখবি অবরোধ।
এ পর্যন্ত কত মেয়ের মন আগুনে পুড়িয়েছেন?
আগুন: গান করতে গিয়ে অনেক মেয়েই আগুনে পুড়েছে। কিন্তু আমার তো একটাই মন তাই একজনকেই দিয়েছি।
প্রেম করে বিয়ে করেছেন?
আগুন: হ্যা দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রেম করেছি। আমি যখন সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি তখন ও ক্লাস টু-এ পড়ে। মাঝখানে আট বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিলো না। তখন ব্যান্ড আর গান নিয়ে হিরো হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর হঠাৎ একদিন দেখি একই প্রোগ্রামে ওর নাচের আর গানের শো ছিলো। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া আমাকে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু আমি তখনো ওকে চিনতে পারিনি। এরপর আবার বললো ভাইয়া আমি। ভালো করে দেখে বললাম আরে তুই সেই পিচ্চি না। তারপর দুইমাস প্রেম করে বিয়ে পর্ব সেরে ফেললাম। সবার দোয়ায় অনেক ভালো কাটছে সংসার-জীবন। কিন্তু সংসারে আমি পাগল ও পুরোপুরি সুস্থ।