নারী ক্রিকেট ঘিরে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, খেলোয়াড় নির্বাচন ও মাঠের সিদ্ধান্তে কোচ-অধিনায়কের চাওয়ার প্রতিফলন কম ঘটে। এবারের এশিয়া কাপে সেটি ঘটেনি। নতুন কোচ ও অধিনায়ক যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই খেলেছে দল। যারা মাঠে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন তাদের শতভাগ স্বাধীনতা দেয়াতেই এসেছে স্বপ্নের শিরোপা- এমনটি মনে করছেন ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। যিনি রুমানা, সালমা, জাহানারা, ফাহিমা ও আয়শাকে জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রস্তুত করা কোচ।
খুলনার এই কোচ কাজ করেন কেবল নারী ক্রিকেটারদের নিয়েই। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিভিন্ন সময়ে তার হাতে গড়ে উঠেছে ১৩ ক্রিকেটার। যারা বিভিন্ন সময়ে খেলেছে জাতীয় দলে। এশিয়া কাপের ফাইনালের একাদশেই ছিল তার পাঁচ শিষ্য।
ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে নামার আগে কুয়ালালামপুর থেকে গুরুকে ফোন করে পরামর্শ নেন অধিনায়ক সালমা। কথা বলেই ইমতিয়াজ হোসেন বুঝতে পারেন রোববারও জয় তুলে এশিয়া কাপ মিশন সফল করবে টিম টাইগ্রেস।
‘সকালে হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার সময় সালমা ফোন করেছিল। ওরা যে কিছু করতে যাচ্ছে সেটা বুঝেছিলাম তখনই। ওরা খুব স্বাধীনভাবে খেলছে। কোচ ও অধিনায়ক যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই পেরেছে। এটাই সাফল্যের মূল কারণ। মাঠে যারা সবসময় কাজ করে, তারা যদি সিদ্ধান্ত না নিতে পারে বা বাইরের কেউ সিদ্ধান্ত দিতে চায় তখন সবকিছু কঠিন হয়ে যায়। আমি এমনটাই আশা করেছিলাম, যেন কোচ-অধিনায়কের বাইরে কেউ না থাকে।’
‘ফাইনালে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দারুণ করেছে মেয়েরা। সালমা বোলিংয়ে যখন যাকে ব্যবহার করেছে সাফল্য এসেছে। সবসময়ই বলে এসেছি সালমা-জাহানারা-রুমানারা খুব ভালো ক্রিকেটার। সালমা একসময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছিল। তারপর দুই-তিন বছর তেমন ম্যাচ খেলারই সুযোগ পায়নি। এখন পাচ্ছে এবং তারা দেখাচ্ছে।’ -যোগ করেন ইমতিয়াজ হোসেন।
ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় ইমতিয়াজ হোসেন ২০০৬ সাল থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে করে যাচ্ছেন নারী ক্রিকেটার তুলে আনা ও গড়ে তোলার কাজ। খুলনা বিভাগীয় নারী দলের কোচ তিনি। পকেটের টাকা খরচ করেই বল-ব্যাট-প্যাড-হেলমেট কিনে সাহায্য করেন ক্রিকেটারদের। নারী ক্রিকেটার তুলে আনার প্রতিষ্ঠান যেন তিনি! এক যুগ নিরলসভাবে খেলোয়াড় তৈরির কাজ করে বুঝেছেন, নারী ক্রিকেটে এমন সাফল্য পেতে আরও অনেক ক্রিকেটার তুলে আনা জরুরী। জেলা লিগ চালু করারও তাগিদ দিলেন।
‘সবার আগে মেয়েদের জেলা লিগ চালু করতে হবে। আরও অনেক ক্রিকেটার তুলে আনতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে। রুমানা-সালমারা এ দেশে নারী ক্রিকেট শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে। পাইপলাইনে কিন্তু ক্রিকেটার নেই। যারা ভবিষ্যতে তাদের বিকল্প হবে।’
ইমতিয়াজ হোসেনের পরিচর্যায় প্রতি বছরই নারী দলে জায়গা করে নেন কোনো না কোনো ক্রিকেটার। বাংলাদেশের স্মরণীয় পারফরম্যান্সের পেছনে জাতীয় দলের কোচদের যেমন অবদান, তারও অবদান কম নয়। তবে সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব খেলোয়াড়দেরই দিচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ এ কোচ।
‘আমি প্লেয়ার বানাইনি, ওরাই হয়েছে। আমার কেবল গাইডলাইন ছিল। এটা ওদের পরিশ্রমের ফল। ওদের কারোরই আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। আসলে চেষ্টা, সাধনা থাকলে অনেককিছুই করা যায়। মেয়েরা তাই করেছে। মেয়েরা দেখিয়েছে কতটা ভালো খেলতে জানে। এখন দরকার বোর্ডের পক্ষ থেকে ওদের জন্য সহযোগিতা বাড়ানো।’