প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ডব্লিউএইচও-কে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ডব্লিউএইচও-এর স্বাস্থ্য বিষয়ক এসডিজি অর্জনে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ৫৫তম সংস্করণে ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-ডব্লিউএইচও কেয়ার্স’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছরের অধিক বয়সের লোকদের জন্য বিনা খরচে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-৩ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি কার্যকর, ফলদায়ক আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইবোলা, কলেরা ও যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগ পুনরায় বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে, ফলে বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পরিবর্তন প্রয়োজন’।
শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভবিষ্যৎ ও জরুরি অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ডব্লিউএইচও সংকটের বিশালতা, পূঁজি সঙ্কট ও সক্ষমতার অভাবের কারণে প্রায়শই ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রধান মানবিক সংস্থা হিসাবে ডব্লিউএইচও সঠিকভাবেই সকলের স্বাস্থ্য ও সুখের নিশ্চয়তার জন্য সরকারগুলোর কাছ থেকে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য।’
শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। এ কারণেই এ সেবায় আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা আমাদের জনগণের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছি না। অথচ এসডিজি-৩-তে স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক অঙ্গীকার হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ১৭২-এ কমে এসেছে। শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে ২৪-এ নেমে এসেছে এবং প্রতি হাজারে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু ৩১-এ কমে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘রেজিমেন চিকিৎসার ফলে এমডিআর-টিবি চিকিৎসার মেয়াদ লক্ষ্যণীয়ভাবে ২০ মাস থেকে কমিয়ে ৯ মাসে এনেছে এবং এক্ষেত্রে চিকিৎসায় সফলতার হার যথেষ্ট ভালো। বর্তমানে সারা বিশ্ব স্বল্পমেয়াদী এমডিআর-টিবি রেজিমেন গ্রহণ করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ১৮ হাজার পাঁচশ’টির বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো তৃনমূল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা সহ ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করছে।তার সরকার সারাদেশে, অন্ততপক্ষে প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে ওষুধ ও স্বাস্থ্য পরিসেবা সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘‘সরকার ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ‘এসডিজি’ লক্ষ্যমাত্রাসমূহ উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।আমাদের ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’-এ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য এবং গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ডব্লিউএইচও’র জরুরী কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।