২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা, একটা ফোন কল পায় সার্গেই, স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে খারকিভে থাকা এক বন্ধুর নাম। ফোনটা রিসিভ করতেই বলে উঠে, তারা বোমা আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
একটু চুপ করে থেকে সার্গেই রাশিয়ার হামলার প্রথম দিনটি আবারও স্মরণ করল।
সার্গেই এবং তার পরিবারের অধিকাংশই তখন রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করছিল। কিন্তু ইউক্রেনে তখন যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে, যুদ্ধের ভয়ানক থাবা পূর্ব থেকে পশ্চিমে পদযাত্রা শুরু করেছে একসময় তাদেরকে বাধ্য হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।
ওয়ারশ থেকে ১০০ কি.মি (৬২ মাইল) উত্তরে একটি ছোট পোলিশ শহর অস্ট্রো মাজোভিকার একটি হোটেল থেকে, সার্গেই এবং তার বোন ওকসানা, আল জাজিরার সাথে ভিডিও কল এবং টেক্সটের মাধ্যমে তাদের সেই গল্প বয়ান করেন৷
সার্গেই ইউক্রেন ত্যাগ করে তার বাবা, স্ত্রী এবং শ্বাশুড়িকে সাথে নিয়ে। অন্যদিকে ওকসানা এই যুদ্ধ থেকে পালাতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নকে বেছে নেয়।
পরিবারটি সেই উদ্দেশে ভ্রমণ শুরু করার সাথে সাথে তাদের ৮৪ বছর বয়সী বাবা ওলেহের স্বাস্থ্য গুরুতর অবনতি শুরু হতে থাকে। অবশেষে যখন তারা সীমান্তের ওপাড়ে নিরাপদে পৌঁছেছিল, ওকসানা তাদের সাথে দেখা করতে পোল্যান্ডে ছুটে গিয়েছিল।
হামলার সূচনা
হামলার প্রথম দিনের কথা শুরু করে ওকসানা বলেন, অন্যান্য দিনের মত সেদিনও আমি আমার মেলবোর্নের অফিসে কাজ করছিলাম। এরপর আমি আমার সহকর্মীদের সাথে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। খেয়ে ফেরার পরই আমি খবরে দেখতে পেলাম এই সময়ের মধ্যে কিয়েভে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গেছে।
ঘটনাটি দেখার সাথে সাথেই ওকসানা তার ভাই সার্গেই এবং অন্যান্য স্বজনদের কল দিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন।
প্রথমে, সার্গেই স্থির থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেখানে প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর অন্তর এলার্ম বাজিয়ে বোমা হামলা চলছিল, এক পর্যায়ে সার্গেই এবং তার স্ত্রী বাথরুমে একটি বিছানা তৈরি করেছিলেন।
ওকসানা বলেন, তাদের ঘরটি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের প্রান্তে ছিল, মোটা বাহ্যিক দেয়াল ছিল তার পাশে, তাই তারা মনে করেছিল যে অ্যাপার্টমেন্টে গোলা বর্ষণ করা হলে এটিই হবে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
সার্গেই’র মতে, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা সেই বাথরুমেই সারাদিন রাত পড়ে ছিলাম। সেখান থেকে কেবল নিজেদের জন্য কোনো খাবার প্রস্তুত করতে কিংবা দ্রুত কিছু খেয়ে নিতেই বের হতাম।
সার্গেই এবং ওকসানার বাবা ওলেহ অবসরপ্রাপ্ত। ২০২০ এবং ২০২১ সালে দুটি স্ট্রোক তাকে অক্ষম এবং হুইলচেয়ারে আবদ্ধ করে রেখেছে। কিয়েভে, তিনি তার নিজের অ্যাপার্টমেন্টে দুইজন নিবেদিত তত্ত্বাবধায়কের সাথে থাকতেন যারা তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে সাহায্য করতেন।
যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে, কয়েকবার এমন হয়েছিল যে শিফটে থাকা তত্ত্বাবধায়ক ওলেহের ফ্ল্যাট থেকে জিনিস কেনার জন্য বাইরে গেলে বিমান হামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাইরে আটকা পড়ে যেতো। ওকসানা বলেন, আমাদের বাবা করিডোরে একা বসে তার ফেরার অপেক্ষা করতেন।
যখন পরিচর্যাকারীরা জানায় যে, তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে, তখনই সের্গেই বুঝতে পারেন এবার তার বাবাকে কিয়েভ থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে।
সার্গেই বলেন, তিনি ভেবেছিলেন পরিচর্যাকারীরা তার বাবাকে ছেড়ে যাবেন না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে এই যুদ্ধ। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন এটা সম্ভব না এবং তাকে তার বাবার জন্য কিছু করতেই হবে কারণ কিয়েভে তার বাবা’র জন্য প্রয়োজনীয় কোনো মেডিক্যাল সেবাও অবশিষ্ট ছিল না।
তখন তার মনে পড়ে লাটভিয়াতে থাকা ওলেহর বড় বোনের কথা। কয়েক বছর আগে যিনি সার্গেইকে কিছুদিন সেখানে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সার্গেই তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সার্গেইকে তার কাছাকাছি স্থানে তার বাবার জন্য বৃদ্ধের পরিচর্যা কেন্দ্র খুঁজে দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেন।
৮৭ বছর বয়সে, তার আন্টি এর চেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেনি, তবে এটিই সার্গেইর জন্য যথেষ্ট ছিল।
১৪ মার্চের সকাল ৭টায়, কিয়েভে তখন রাত ৯টা- সকাল ৭টা পর্যন্ত দেয়া কারফিউ শেষ হওয়ার পরপরই, “আমরা বাবার ফ্ল্যাটে যাই এবং এই ভ্রমণের সময় আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস সংগ্রহ করতে শুরু করি,” বলেন সার্গেই।
সার্গেই সেই সময় তার বাবাকে নিয়ে আসার স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, বাবা খুব দুর্বল বোধ করছিলেন, তিনি গাড়ির সীটে বসানোর জন্য এক পাও আগাতে পারছিলেন না। তাই আমিই তাকে আলুর বস্তার মতো টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম”।
ওকসানা বলেন, “ভাগ্যক্রমে তাদের কাছে একটি গাড়ি ছিল কারণ কিছু লোকের কাছে সেটিও ছিল না। তারা এটা কানায় কানায় ভরে ফেলেছিল। আমার বাবা, তার হুইলচেয়ার, তার বহনযোগ্য টয়লেট, তার কিছু জামাকাপড় এবং তারপরে তাদের একটি ছোট কুকুরও ছিল”। গাড়িটি তাদের “নূহের নৌকার মতো ছিল!”
কিয়েভ ত্যাগ করা
তারা যখন কিয়েভ ত্যাগ করছিল, রুশ বাহিনী তখন কিয়েভের উত্তর শহরতলির দিকে আগাচ্ছিল।
“কিয়েভ থেকে লভিভ পর্যন্ত যাওয়ার যে হাইওয়েটি ছিলো তা তখন রাশিয়ানদের দখলে চলে যাচ্ছিলো,” ওকসানা বলেন, “আমার স্বামী এই খবরটি জানাতে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন যে ‘তারা (সার্গেই) কি জানে যে তারা এই মহাসড়কটি নিতে পারবে না?’
তবে শেষ পর্যন্ত উৎকণ্ঠা দূর করে সার্গেই এমন একটি পথ ধরে আগায় যা লভিভের মধ্য দিয়ে পশ্চিমে চলে যায়। সেখান থেকে, তিনি লাটভিয়া পৌঁছানোর জন্য হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া হয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
যদিও যাত্রাটি বেশ কঠিন ছিল।
সার্গেই বলেন, আমাদের যাত্রা শুরু হল। রাস্তাগুলো আগেকার মতোই বেশ ফাঁকা ছিল। শুধুমাত্র কিছু ব্লক-পোস্টই দেশে যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
“এই ভ্রমণের সময় আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি ছিল জ্বালানীর কমতি এবং জ্বালানি পেতে গাড়ির বিশাল সারি পার হয়ে যাওয়া” তিনি বলেন, সে সময়ে ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে এক একবারে তারা মাত্র ১০ বা ২০ লিটার পেট্রোল কিনতে পারতো তাই একটি পূর্ণ ট্যাঙ্ক পেতে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার কিনে পূরণ করতে হয়েছিল।
তাছাড়া এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জ্বালানি যোগাড় করা খুবই ভীতিকর ছিল কারণ আমরা কেউও এই গ্যাস স্টেশনে পেট্রোল অবশিষ্ট আছে কি না কেউ জানতাম না বা আমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত পেট্রোল আছে কি না।
সার্গেই বলেন, তবে এই যাত্রাটি ওলেহের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল।
“আমাদের বাবার জন্য, গাড়ি থেকে বের হওয়া একটি অত্যন্ত বড় সমস্যা ছিল”। তারা তাকে সাহায্য করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক ন্যাপি কিনেছিল, কিন্তু তিনি সেগুলো ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন।
ওকসানা বলেন, “পথে গাড়িতে তাদের বাবার কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল এবং অবশেষে যখন তারা তাদের প্রথম স্টপে পৌঁছেছিল, লভিভ থেকে যা প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে একটি শরণার্থী কেন্দ্রে সেখানেই বাবাকে পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়েছিল”।
সার্গেই বলেন, “প্রতি রাতে তাকে (বাবাকে) এবং আমাদের বিছানা ধুয়ে দিতে হতো”।
এ পথ ধরে
তারা ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, সার্গেইয়ের স্ত্রী নাতাশাও খারকিভে বসবাসকারী তার বাবা-মাকে তাদের সাথে যেতে বলেছিলেন। তার বাবা থাকার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু তার মা ট্রেনে করে লভিভে এসেছিলেন এবং সেখানে শরণার্থী কেন্দ্রে তাদের সাথে দেখাও করেছিলেন।
লভিভের বাইরের এই কেন্দ্রটি একটি পুরানো বিল্ডিং যা ২০২১ এর শুরুতে একটি স্থানীয় কারখানার কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।
সার্গেই বলেন, এখানেই তারা এই অফিসের কিছু অংশ পরিবর্তন করে আসবাবপত্র বের করে এনে মানুষের থাকার জন্য বিছানার ব্যবস্থা করেছিল।
ওকসানা বলেছেন, বিছানাগুলো সোভিয়েত-শৈলীতে ধাতুর জালে তৈরি ছিল, এটি অনেকটা হ্যামকের মতো এবং যার উপর তুলার গদি লাগালেও তা বেশ অস্বস্তিকর লাগতো কারণ বিছানাগুলো ঝুলে যায়।
তবে সেখানকার বাসিন্দারা আমাদের খুব আন্তরিক আতিথেয়তার সাথে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
তাদের যাত্রার পরবর্তী পদক্ষেপ ছিলো, ওলেহ যে অক্ষম তা প্রমাণ করার জন্য একটি প্রশংসাপত্রের ব্যবস্থা করা যাতে সার্গেই তার তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে তার সাথে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে।
ইউক্রেনীয় নিয়মের অধীনে ১৮-৬০ বছর বয়সী সমস্ত পুরুষ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাধ্যতামূলকভাবে সেনাতে নিয়োগের সম্মুখীন হন এবং তাদেরকে অবশ্যই পিছনে থেকে লড়াই করতে হবে।
কিন্তু সার্গেই ছাড়া তাদের বাবার পক্ষে কোথাও যাওয়া অসম্ভব ছিল, ওকসানা বলেন, দুইজন নারীর পক্ষে বাবার এই অবস্থা সামাল দেয়া সহজ না।
শেষ পর্যন্ত তারা রোমানিয়ার ভেতর দিয়ে ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ রোমানিয়ার সীমান্তে ইউক্রেনীয় সীমান্তরক্ষীরা কম কঠোর কঠোর বলে জানা ছিল এবং তারাই সম্ভবত ইউক্রেন ত্যাগে আমার নথি গ্রহণ করে ছাড় দিতে পারে বলে আশা করছিলেন সার্গেই।
এবং তাদের এই ভাবনা ঠিক ছিল। তাদের নিরাপদে রোমানিয়া পাড়ি দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং তাদের পরিবার আবারও পথে চলতে শুরু করে।
কঠিন যাত্রা
কিন্তু দীর্ঘ, কষ্টসাধ্য এই যাত্রা ওলেহের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। সার্গেই বলেন, “তিনি তেমন কিছু খেতে না পারায় তাকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল”।
১৫ মার্চ মধ্যরাত ১টায় যখন তারা পোল্যান্ডে প্রবেশ করে তখন তাদের জীবনে আসে আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট। ওলেহ তার সিট থেকে পিছলে পড়ে গিয়েছিল।
সার্গেই বলেন, “আমি একটি গ্যাস স্টেশনে থামার এবং তাকে সঠিকভাবে বসতে সাহায্য করার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এর ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি কাঁদতে শুরু করেন এবং অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন৷ তার শরীরও তখন কাঁপতে শুরু করে।”
তখন অস্ট্রো মাজোয়িইকার কাছে একটি গ্যাস স্টেশনে থামিয়ে সার্গেই একটি দোকানের ভিতরে দৌঁড়ে কাউকে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলে।
সার্গেই জানান, দোকানের কাউন্টারের পিছনের যুবতী আমাকে বুঝতে পারেনি। কিন্তু এই দোকানে থাকা একজন লোক আমাকে ইউক্রেনীয় ভাষায় জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে এবং অনুবাদ করেছে। এই লোকটি একজন ইউক্রেনীয় ট্রাক চালক যিনি তার গাড়ির রিফিল করার জন্য এই গ্যাস স্টেশনে থেমেছিলেন।
তাকে বলার মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে।
প্যারামেডিকরা ওলেহকে স্ট্রেচারে রেখে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা চালানো শুরু করে। আরও ১০ মিনিট পর তারা আমাদেরকে জানায় যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সার্গেই বলেন, “প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর, অভ্যর্থনাকারী আমাকে ডেকে জানান আমাদের সম্ভবত বেশ কয়েকদিন মেডিক্যালে থাকতে হবে”।
তখন ভোররাত ৩টা, এই ছোট শহরে থাকার জন্য কিছু স্থানীয়দের সাহায্য করার জন্য বলেছিল সার্গেই এবং শীঘ্রই তারা একটি হোস্টেল খুঁজে পায়।
রুমটি ছিল নোংরা, লিনেন ভেজা, বাথরুমে “নোংরা সরঞ্জাম” এবং স্যাঁতস্যাঁতে। তারা বাথরুম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয় এবং তাদের নিজস্ব তোয়ালে বা কম্বল দিয়ে তাদের বালিশ ঢেকে দেয়।
পরের দিন হাসপাতালে, তাদের জানানো হয়েছিল যে ওলেহের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং কমপক্ষে আরও পাঁচ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
সার্গেই জানায় তখন তাদের কাছে সীমিত পরিমাণ অর্থ ছিল এবং একটি হোটেল এমনকি একটি হোস্টেলে থাকারও সামর্থ্য ছিল না৷
“অগত্যা হাসপাতালে আমি জরুরী কলের জন্য আমার মোবাইল নম্বরটি রেখে ইতালির পিয়াসেঞ্জা শহরে চলে যায় যেখানে আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার লুকার সাথে দেখা হয়েছিল।”
ওলেহ হাসপাতালে থাকার সময় তারা ইতালিতে লুকার সাথেই ছিলেন।
কিন্তু যখন তারা পোল্যান্ডে ফিরে আসে, ডাক্তার সার্গেইকে বলেন ওলেহ অত্যন্ত দুর্বল এবং তার সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।
এরপর সার্গেই ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে তার বাবাকে দেখার অনুমতি পায়।
কিন্তু তার বাবা তখন কিছুই বলতে পারছিলেন না, তবে তিনি সার্গেইকে চিনতে পারছিলেন এবং এমনকি হাসি দেয়ার চেষ্টাও করেছিলেন।
ফেরার জন্য সংকল্পবদ্ধ
ওলেহের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাই তার আরোগ্য লাভও ধীরে হবে বলেই ধরে নেন সার্গেই। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে। প্রত্যেকদিনই তাকে একটু একটু করে সুস্থ হতে দেখা যাচ্ছে।
ওকাসানা বলেন, এখন তাদের মূল দায়িত্ব তাদের বাবার যত্ন নেয়া এবং তিনি যথাযথ মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন কি না তার খেয়াল রাখা।
এখন তাদের পরিকল্পনা যতক্ষণ না তাদের বাবাকে ইউক্রেনে ফিরিয়ে নেয়া নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে তার আগ অবধি পোল্যান্ড বা লাটভিয়াতে তার জন্য একটি ভাল পুনর্বাসন কেন্দ্র খুঁজে বের করা।
ওলেহ’র এই যাত্রা ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে পালানোর বাস্তবতার উদাহরণ তুলে ধরে।
ওকসানা বলেন, এটি এমন একটি যুদ্ধ যা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং স্বাভাবিক মর্যাদাপূর্ণ অস্তিত্বের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
সার্গেই জানান, কিন্তু এই যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয়রা কতটা শক্তিশালী এবং ইউক্রেনীয়দের দেখিয়েছে, আমরা কারা এবং কীভাবে আমরা আমাদের বাড়ি এবং পরিবারকে রক্ষা করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, “নিশ্চিতভাবে আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরই বিশ্বের সবচেয়ে সফল, সুখী এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ফিরে আসব”।
শেষে দীপ্ত কণ্ঠে তাই বলে উঠে এটি “আমাদের দেশ ইউক্রেন! আমাদের শহর, কিয়েভ!”