শৈত্য প্রবাহ আর হিমেল হাওয়ায় সারাদেশে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। সেই সাথে বৃষ্টি আরো বড়িয়েছে দুর্ভোগ। কয়েকদিনে শৈত্য প্রবাহে ক্রমেই নেমে আসছে তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস বলছে আজ থেকে রাতের তাপমাত্রা আরও নামতে পারে।
সকালে প্রচণ্ড কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে চারদিক। দিনের মাঝামাঝি সময় সূর্যের দেখা মিললেও কমছে না শীতের তীব্রতা। কয়েকদিন ধরে বইছে শৈত্য প্রবাহ। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
আবহাওয়াবিদ কাওসার পারভীন চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: আজ থেকে রাতের তাপমাত্রা আরো কমবে। তবে দিনের তাপমাত্রা আগের থেকে সামান্য কিছুটা বাড়বে।
তিনি আরও বলেন: সারাদেশে যে শৈত্যপ্রবাহ চলছে এমন অবস্থা থাকতে পারে আরো দু’দিন। তারপর আবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে আবাহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থা কিছুদিন বিরাজ করলেও পুনরায় শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
পঞ্চগড়
আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে সূত্রমতে, উত্তরের হিমেল বাতাসের প্রভাবে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমে আসছে। ফলে, জেঁকে বসেছে শীত।
শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে পঞ্চগড়ের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে নদী থেকে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। এসব শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সংখ্যক শীতবস্ত্র না থাকায় সকালে ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
পঞ্চগড়ের কোন সরকারি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা ছুটছেন ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুরে। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
দিনাজপুর
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্ত জেলা দিনাজপুরসহ শীতে উত্তরের জনপদের অবস্থা জবুথবু। শৈত্য প্রবাহে ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠাণ্ডায় নাকাল জনজীবন। দিনাজপুরে আজ সর্বনিন্ম তাপমাতত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র শীতে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
প্রচণ্ড শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় সন্ধ্যে হলেই দিনাজপুর শহরসহ গ্রামাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষ।
গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। এ অবস্থায় কাজে বের হতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে তারা। কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ জোটাতে পারছেন না দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা।
ঘন কুয়াশার কারণে সকালে ১০ ফুট দুরেও কোন কিছু দেখা যাচ্ছে না। সড়কে যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় সমান থাকায় জনজীবনে কষ্টের শেষ নেই। মৃদু হিমেল বাতাস ও কুয়াশা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় যানবহন ও ট্রেন চলছে ধীর গতিতে হেড লাইট জ্বালিয়ে।
আজ চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন জানান: রোববার সকাল থেকে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন হিমেল হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সারাদেশে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে।