বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক রাখা ও হাওরের বন্যার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য অস্থায়ীভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তুতি চলছে। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। সম্প্রতি বন্যার কারণে হাওর এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি হাওরে বন্যায় ফসলাদি নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিবে কি না, কী পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে সংকট মোকাবেলা করা যাবে কি না, কিংবা বিদেশ থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো যায় কিনা- এসব বিষয় নিয়ে খাদ্য মন্ত্রনালয়ে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর এপ্রিলের শেষদিকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক বর্তমানে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে তা ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব পাঠায় খাদ্য অধিদপ্তর। তা পর্যালোচনা করে কয়েক দফা বৈঠকের পর মন্ত্রণালয় শুল্ক কমানোর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়।
সম্প্রতি আবারো এ বিষয়ে বৈঠক হয়। সেখানে শুল্ক শূন্য বা ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব উঠে। সে অনুযায়ী খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আমদানি শুল্ক শূন্য বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হয়। চাল আমদানির পথ কিছুটা সুগম করতেই এই উদ্যোগ। এতে দেশে চালের সরবরাহ বাড়বে। ফলে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
তবে শুল্ক শূন্য না ১০ শতাংশ হবে তা নির্ভর করবে বাজার মনিটরিং ও বর্তমান মৌসুমের বোরো ধান কি পরিমানে উঠেছে তা বিশ্লেষণের উপর। এছাড়া কৃষকের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। বাজারে ধানের দাম বেশি হলে শুল্ক কমবে। অন্যথায় কমবে না।
বর্তমানে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ৩ শতাংশ রেগুলেটোরি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর আগে ছিল ১৫ শতাংশ। শুল্ক বাড়ানোর কারণে দেড় বছর ধরে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে আসলেও তা কমেনি।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চাল ও গম মিলে কমবেশি ৫ লাখ টন মজুদ আছে। অবশ্য গত বছর এ সময়ে মজুদ ছিল ১০ লাখ ৫৭ হাজার টন।
কৃষি অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য শুল্ক শূন্য বা প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে শুল্ক শূন্য না হলেও ১০ শতাংশে নেমে আসতে পারে। কিন্তু তা বাজার মনিটরিং ও কৃষকের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার উপর নির্ভর করবে।
চলতি মৌসুমে সারা দেশে এক কোটি ৯১ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। এর মধ্যে হাওরে ৭/৮ লাখ টন ধান নষ্ট হলে বাজারে কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। কারণ যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী ও বগুড়ায় ৩৫ শতাংশ, নাটোরে ৬০ শতাংশ, নওগাঁয় ৩২ শতাংশ ও রংপুরে ২০ শতাংশ ধান উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মোটামুটি শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়।
খাদ্য অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, অল্প সময়ে ধানের দাম স্বাভাবিক নিয়মে চলে আসবে। দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। বাজারে ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম না বাড়াতে পারে সে জন্যই এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।