চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় অসভ্যতায় ক্ষুব্ধ বিশিষ্টজনেরা

নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষক নয়, কান ধরে পুরো দেশই ওঠ-বস করেছে। দেশের এই লজ্জা দূর করতে শনিবারের মধ্যে শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মীরা। বিচার না করে সাময়িক বরখাস্ত করাকে রাষ্ট্রীয় অসভ্যতা উল্লেখ করে শিক্ষকের পুনর্বহালের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। 

দাবি বাস্তবায়নে আগামী ২১ মে শাহবাগে সংহতি সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শাহবাগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশে যোগ দেয়া লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মীরা বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলছে। আর এই সন্ত্রাসে মদদ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত ফল হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

শিক্ষক নির্যাতনের বিচার না করে উল্টো নির্যাতিত শিক্ষককে বহিস্কার করাকে ‘রাষ্ট্রীয় অসভ্যতা’ বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সমাবেশে যোগ দেয়া বিশিষ্টজনেরা।

বিক্ষুব্ধদের মতে শিক্ষকের কান ধরে ওঠ-বস করার দৃশ্য বাংলাদেশে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হত্যা ও বিচারহীনতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটের মতো কলঙ্কগুলোরই ধারবাহিকতা মাত্র। আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বর্বরতম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব রটিয়ে একদল লোক তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে।

স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান ও তার তল্পিবাহী প্রশাসন সেইসব দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রধান শিক্ষককে নিগ্রহের শিকার বানান। দেশে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিবরণ টেনে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ জাতীয় বেশ কিছু ঘটনা আমরা দেখেছি। বাগেরহাট জেলার চিতলমারীর হিজলায় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অপর একজন শিক্ষককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ও গুজব ছড়িয়ে তাদেরকে স্কুলের মধ্যে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের গ্রেপ্তার করে, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বসিয়ে তাদের শাস্তি দেন। ছয়মাসের কারাদণ্ড এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ফেসবুকে লেখার সূত্র ধরে কুড়ি বছর বয়সী একটি মেয়ের উপর চড়াও হয় একদল দূর্বৃত্ত।সেই মেয়েটিকেও গ্রেপ্তার করে জেলে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে।’

আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রকাশক রবিন আহসান বলেন,‘ বার বার শাহবাগেই আসতে হচ্ছে। মুক্তবুদ্ধি এবং আবহমানকালের অসাম্প্রদায়িক বাংলায় একের পর এক সাম্প্রদায়িক আঘাত আসছে। অথচ এসবের বিচার না করে উল্টো কান ধরার নতুন এক বিচার ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্রকে ব্যর্থ প্রমাণের প্রচ্ছন্ন সহায়তা দেখা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষককে এমন অপমান। শিক্ষকের এমন লাঞ্ছনায় দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে,লজ্জা ও ক্রোধে অধীর বাংলাদেশ জড়িতদের কান ধরে ওঠ-বস করাবে।’

সমাবেশে যোগ দিয়ে ক্ষোভ-দুঃখভরা কণ্ঠে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন,‘ আমার বাবাও স্কুল শিক্ষক। তাই শ্যামল স্যারকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর দৃশ্য দেখে আমার মনে হয়ে বাবাকেই যেনো নিষ্ঠুরভাবে অপমান করা হচ্ছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত যে স্কুলে ১৮ বছর ছাত্র পড়ালেন সেই স্কুলেই তাকে চরমভাবে অপমান করা হলো। এতো বড় অন্যায়ের পরও কেউ এগিয়ে না আসায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘ এই যদি হয় শিক্ষাগুরুর মর্যাদা তাহলে একদিন হয়তো এই দেশে শিক্ষকরা ছাত্র মানুষ করার স্বপ্নই দেখবেন না’।

এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সাম্প্রদায়িকতাকে ‘না’ বলার সাহস নিয়ে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। অন্যায়ের প্রতিবাদে সবার ঐক্য দরকার জানিয়ে তিনি বলেন,‘ ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ’র উর্দু ভাষার প্রস্তাবে কয়েকটি ক্ষুদ্র কণ্ঠ পাকিস্তানি চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ‘নো- নো’ বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। এখন সময় এসেছে আবারও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই ‘না’ বলা শুরু করার’।