চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সামাজিক কাঠামোই বলবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং নৈতিকতা চর্চা কেমন হবে

চিকিৎসক ও তাদের নৈতিকতা  পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সীমাবদ্ধ

নৈতিকতার চর্চা কিন্তু একদিনে হয়না, নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হয় জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন চিকিৎসকদের নিয়ে যতো আলোচনা হয়, তার বেশিরভাগই নেতিবাচক।

আমরা এক্ষেত্রে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না সামাজিক কাঠামোই নির্ধারণ করবে যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং নৈতিকতা চর্চা কেমন হবে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে দৈনিক স্বাস্থ্য আয়োজিত ও ইউনিগো কমিউনিকেশন্সের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘চিকিৎসকদের নৈতিকতা চর্চা: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, সমাজের সব ক্ষেত্রে যখন অনৈতিকতার চর্চা হয়, তখন স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে আমরা কিভাবে নৈতিকতার বেশি আশা করি। এখানে বলে ইংল্যান্ড বা জাপানের মতো স্বাস্থ্য সেবা আশা করতে পারিনা। আমাদের দেশে একজন ইন্টার্ন ডাক্তার মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পায়। অথচ একজন রিক্সা চালকও এরচেয়ে অনেক বেশি আয় করে থাকে। সহনশীলতার সাথে আমাদের অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। আমাদের বাস্তবে আসতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে শুধু স্বাস্থ্য নিয়ে সমালোচনা করলে হবে না।

সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাপানের এহিমে ইউনির্ভাসিটি গ্রাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ডা. ফজলে আকবর। তিনি বলেন, নৈতিকতা মূলত নিজস্ব চর্চার বিষয়। নৈতিকতা আর আইন এক নয়। আইনের সামগ্রিক কোন রূপ নেই। এক দেশে আইন হলেও অন্য দেশে সেটা আইন নাও হতে পারে। এমনকি এক দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে আইন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু নৈতিকতা সারাবিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে একই।

তিনি বলেন, এদেশে চিকিৎসকদের নৈতিকতার স্খলনের যেসব বিষয় আয়োচিত হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা নিতে হবে। জাপানে শতভাগ মানুষ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকায় চিকিৎসাক্ষেত্রে সবাই সমান সুবিধা পেয়ে থাকে। আবার আমেরিকাতে যার টাকা নেই তার চিকিৎসাও নেই। কোথাও এসব বৈধ আবার কোথাও অবৈধ। কোথাও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আছে, কোথাও নেই। তাই নৈতিকতার বিষয়টি আপেক্ষিক। নৈতিকতার সমাধানটা আমাদের বিবেক থেকে আসতে হবে, আইনসিদ্ধ নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, আমি মেনে নিচ্ছি চিকিৎসকদের নীতি নৈতিকতার অভাব রয়েছে। তবে এ অভাব কি শুধু চিকিৎসকদের মধ্যে, নাকি অন্য সব পেশাতেই রয়েছে। আমাদেরকে ঢালাওভাবে দোষ দিলে সমাধান হবে না। নৈতিকতা চর্চা সমাজের সব পোশাতে সমভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, নীতি নৈতিকতা বায়বীয় বিষয় নয়, এগুলো নির্ভর করে সার্বিক আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির উপর। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এরপর থেকে ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যা বর্তমানেও দৃশ্যমান। চিকিৎসকদের নৈতিকতার প্রশ্ন তোলার আগে সমাজ বা রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে।