‘মুজাহিদের রায়ে তৃপ্ত বা খুশি কোনোটাই না বলে বলবো ৭১-এর নৃশংসতার উচিৎ শাস্তি হয়েছে। এটা প্রতিশোধ নয়, বিচার।’ আপিল বিভাগে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকার পর আবেগে না ভেসে যুক্তির ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে জাহীদ রেজা নূর।
সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ এবং হত্যা মামলায় আলাদাভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সামগ্রিকভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় সর্বোচ্চ আদালত ওই অভিযোগে আর আলাদাভাবে মৃত্যুদণ্ড রাখেন নি।
কিন্তু এজন্য তার আলাদা কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
জাহীদ রেজানুরের মতে, বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেনের অপহরণ ও হত্যায় মুজাহিদকে আলাদাভাবে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে বরং বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়াটা যৌক্তিক হয়েছে।
কারণ হিসেবে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো আল বদর বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুজাহিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় ১ নম্বর অভিযোগ অর্থাৎ তার বাবার অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে একটি সমন্বিত রায় এসেছে বলেই মনে করেন তিনি।
বুদ্ধিজীবী হত্যা ও মুজাহিদের অপরাধের ব্যাপকতা বোঝাতে পেশায় সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রায়ালে নাৎসিবাদী সেমিটিক বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক জুলিয়াস ট্রিচারের মৃত্যুদণ্ডের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন।
ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছিলো। মুজাহিদের বিষয়টিকে এর চেয়েও গুরুতর বলে মনে করেন তিনি। কারণ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এই আলবদর নেতা।
৭১ এ স্বজন হারানো অসংখ্য সাধারণ মানুষ এবং বুদ্ধিজীবীর পরিবার আজ মুজাহিদের রায়ে সন্তুষ্ট বলে জানান জাহীদ রেজা নূর। ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন না করলেও বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে হত্যাযজ্ঞ চালানো খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তিই যৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর রাজাকার, আলবদরমুক্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নতুন স্বপ্নের বীজ বোনার সময় এসেছে বলেও মনে করেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর এই সন্তান।