পাচারের উদ্দেশ্যে সাত শিশুকে হেফাজতে রাখায় সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমানের স্ত্রী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ারাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আনোয়ারাকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর আনোয়ারার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. মনিরুজ্জামান আসাদ।
আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আনোয়ারা এখন কারাগারে আছেন। আজকের আদেশের ফলে তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।’
এর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ারাকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন দেন বিচারপতি এমদাদুল হক এবং বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এরপর সে জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
পাচারের উদ্দেশ্যে সাত শিশুকে হেফাজতে রাখার অভিযোগে সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারাকে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে দণ্ডিত আনিসুর রহমান এ মামলা চলাকালেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বিচারিক আদালতের দেয়া যাবজ্জীবনের রায়ের বিরুদ্ধে পরে হাইকোর্টে আপিল করা হয়।
এর আগে ২০০৬ সালে আনিসুর রহমানের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাড়িতে সাত জোড়া শিশু থাকার খবর প্রকাশিত হলে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, ওই দম্পতি পাচারের জন্য শিশুদের নিজেদের বাড়িতে রেখেছেন।
যদিও অনিসুর দম্পতি সে সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, ওই ১৪ জনই তাদের সন্তান। যদিও সে সময় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় যে, ওই শিশুদের সাত জনের জন্মের পাঁচ বছর আগেই আনিসুরের স্ত্রী আনোয়ারা রহমান স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে আনোয়ারা ওই শিশুদের মধ্যে ৩ জনকে জন্ম দেন আট মাস সময়ের মধ্যে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এরপর মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান ২০০৬ সালের ২ জুন রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তিনি একটি এজাহার দায়ের করেন, যা ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলা হিসাবে গ্রহণ করে আদালত।
এজাহারে বলা হয়, ‘ওই ১৪ শিশুর মধ্যে ৭ জন একেবারেই অল্প বয়সী। আসামিরা শিশু রহস্যের ঘটনায় সঠিক তথ্য সরবরাহ না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য দেওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শিশুরা তাদের নয়। আসামিদের জীবন, কর্ম ও ইতিহাস বলে, তারা ওই শিশুদের বিদেশে পাঠানো বা পাচার বা ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বেআইনিভাবে বিভিন্ন শিশু হাসপাতাল, ক্লিনিক বা আসল অভিভাবকদের হেফাজত থেকে নিজেদের জিম্মায় রেখেছেন।
এরপর ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর এই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে অভিযুক্তদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। মামলার ঘটনাটি নিছক ‘তথ্যগত’ ভুল বলে মন্তব্য করা হয় তার প্রতিবেদনে।
মামলার বাদী ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে আপত্তি জানালে আদালত মামলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষের পর সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত