বহু শতাব্দীর সংস্কার ভেঙে ভারতের কেরালার সাবারিমালা মন্দিরে দুই ‘নিষিদ্ধ বয়সের’ নারী প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ১১০ জন। এছাড়া কান্নুর জেলায় সহিংসতা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার থেকে চলমান সহিংসতায় এ নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ১৮শ’ জন।
তিন দিনে সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে ৮শ’টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
বুধবার গভীর রাতে ৩৯ ও ৪০ বছর বয়সী দুই নারী ব্যাপক বাধা এড়িয়ে সাবারিমালা মন্দিরে প্রবেশের পর থেকে নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া সহিংসতার মাঝে বৃহস্পতিবার কেরালা রাজ্যজুড়ে বন্ধ ঘোষণা করে স্থানীয় বেশকিছু কট্টর ডানপন্থি সংগঠনের জোট সাবারিমালা কর্ম সমিতি।
তাদের এ বন্ধে সমর্থন দিয়েছে ডানপন্থি রাজনৈতিক দল বিজেপি এবং আরএসএস। ডানপন্থি কর্মীরা বন্ধ কার্যকর করতে গেলে বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করে। শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কেরালার বিভিন্ন স্থানে এসব বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মাঝে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেরালার বিখ্যাত সাবারিমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীর (১০ থেকে ৫০ বছর বয়স) প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই মন্দিরের উপাস্য দেবী আয়াপ্পা একজন চিরকুমারী এবং পিরিয়ড হওয়ার বয়স হয়েছে এমন সব নারী ‘অপবিত্র’।
এ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের দেয়া রায়ে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নারী উপাসকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়ান প্রথম থেকেই সর্বোচ্চ আদালতের রায়কেই সমর্থন দিয়ে গেছেন এবং চলমান সহিংসতায়ও তিনি সেই রায় কার্যকরের চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।
হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, শনিবার সকালেও কেরালার থালাসেরি শহরে একটি পতাকা মিছিল নস্যাৎ করে দিয়েছে পুলিশ। থালাসেরি ধর্মীয় সংবেদনশীল একটি শহর। বন্ধ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবারই এখানে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য মুখ্যমন্ত্রীর জন্মস্থান এটি। তারপরও পিনারায়ি এখানে কোনো কট্টরপন্থি আন্দোলনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসেই দু’টো র্যালিতে ভাষণ দেবেন; একটি ১৫ জানুয়ারি কেরালায়, অন্যটি ২৪ জানুয়ারি ত্রিশুরে। তার দল কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন বিজেপি সাবারিমালা নিয়ে তাদের অবস্থান শক্ত করতে ১৫ জানুয়ারি সচিবালয় অভিমুখে মার্চের পরিকল্পনা করেছে।