সাফ অনূর্ধ-১৬ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জয় পায় বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা। এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলো।
টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে গোল করেন ফাহিম মোর্শেদ, জাহাঙ্গীর আলম সজীব, মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ও সাদ উদ্দিন।
আর ভারতের পক্ষে টাইব্রেকে প্রথম গোল করেন সৌরভ মেহের। তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ গোল ফিরিয়ে দিয়ে তারকা বনে যান বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ।
বাংলাদেশের এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, এই সাফল্য বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী কিশোরদের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আগামীতেও বাংলাদেশের কিশোররা বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।
টাইব্রেকারের সময় মাঠে পত পত করে উড়ছিলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। নিজেদের মাঠ, গ্যালারি ভরা উপচে পড়া দর্শকদের উৎসাহে উজ্জীবিত ছিলো বাংলাদেশদ দল।
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পুরো স্টেডিয়াম পুরো সময়ই বাংলাদেশ-বাংলাদেশ শ্লোগানে মুখরিত ছিলো।
৪-১-৫-১ ফরমেশনে বাংলার উজ্জীবিত কিশোররা ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই গুছিয়ে খেলার চেষ্টা করতে থাকে। তবে বৃষ্টির জন্য মাঠ ভেজা থাকায় দু’দলেরই পাসিং ফুটবল খেলাটা ব্যাহত হয়।
প্রথমার্ধের ১৫ মিনিট পর্যন্ত কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে ভারত। তবে সময় যতো গড়িয়েছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল লাল সবুজ।
তবে শাওন-সাদরা প্রথমার্ধের বেশ কয়েকটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। বাংলাদেশের যুবাদের জন্য দুঃখের সংবাদ ছিলো দলের প্রাণ ভোমরা স্ট্রাইকার সরওয়ার জামান নিপু পর পর দু’ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় ফাইনালে খেলতে পারেনি।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে সবচেয়ে সহজ গোলের সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। কর্নার থেকে নেয়া শটে হেডটি একটুর জন্য পোস্টের জাল স্পর্শ করতে পারেনি। ৩১ মিনিটে সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে ভারতের চংগমপিপা। গোলরক্ষক ফয়সালকে একা পেয়েও গোলমুখ খুলতে পারেনি। ৩৪ মিনিটে মাঝমাঠে শাওনদের একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে গোলমুখে এগিয়ে গেলেও ফিনিশারের অভাবে আবারো গোল বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।
আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে গোল শূন্য থেকেই বিরতিতে যায় দু’দল। বিরতির পরই বাংলাদেশ এগিয়ে যায় অধরা শিরোপার লক্ষ্যে। ৪৬ মিনিটে কর্নার থেকে ডি বক্সের জটলার মধ্যে ডান পায়ের দূর্দান্ত শটে গোল করে দেশবাসীকে আনন্দের সাগরে ভাসান ফাহিম মোর্শেদ।
ম্যাচের ৫৭ মিনিটে অ্যাটাকিং থার্ডে সাদ ও আতিকের দারুণ ওয়ান টু ওয়ানে গোলের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলার যুবারা। তবে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ম্যাচে ফিরে ভারত। মাঝমাঠে এক দূর্দান্ত আক্রমণ থেকে ডি বক্সের বেশ বাইরে থেকে অসাধারণ এক শটে সমতা আনেন অভিজিৎ সরকার।
পরে নায়ক হওয়া বাংলাদেশের গোলকিপার ফয়সালের অনভিজ্ঞতা অবশ্য অনেকাংশে দায়ী গোলের জন্য। ফয়সাল বাতাসে পুরো শরীর না ভাসানো জন্য বল নিজের দখলে রাখতে পারে নি।
ম্যাচের ৮৫ মিনিটে খলিল ভূঁইয়ার অসাধারণ একটি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভষ্ট হয়। ৮৮ মিনিটে দারুণ একটি সেটপিস থেকেও গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তেও দারুণ একটি সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় লাল-সবুজ। এরপর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর ১-১ সমতা শেষে টাইব্রেকার যাতে নতুন ইতিহাস। ২০০৩ সালে সর্বশেষ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় দল শিরোপা জিতেছিলো। এক যুগেরও পর সাফ ফুটবলে শিরোপা জিতলো বাংলাদেশের কিশোররা।