তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা রিয়াজুল মওলা রিজু পরিচালিত ছবি ‘বাপজানের বায়স্কোপ’। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছেন। ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ছবিটি ৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে—শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক (মো. রিয়াজুল মওলা রিজু), শ্রেষ্ঠ গায়ক (এস আই টুটুল, ‘উথাল পাথাল জোয়ার’), শ্রেষ্ঠ গীতিকার (আমিরুল ইসলাম, ‘উথাল পাথাল জোয়ার’), শ্রেষ্ঠ সুরকার (এস আই টুটুল ‘উথাল পাথাল জোয়ার’), শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ( মাসুম রেজা), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার (মাসুম রেজা ও মো. রিয়াজুল মওলা রিজু) এবং শ্রেষ্ঠ সম্পাদক (মেহেদী রনি)। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর তার অনুভুতি, ভাবনা আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন রিয়াজুল মওলা রিজু।
কোথায় আপনি?
টাঙ্গাইলে এসেছি। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে আসি। ঢাকায় ফিরে যাই শনিবারে।
কেন?
এখানে আমার স্ত্রী আর সন্তান থাকে। তাদেরকে সময় দিতে আসি।
আপনার ছবি ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে। কেমন লাগছে?
চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খবরটি আমাকে জানানো হয়েছে। এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আসলে জীবনে এত বেশি অপ্রাপ্তি যে, এই সাফল্যটুকু হজম করতে একটু সময় নিতে হচ্ছে। মানসিকভাবে তো প্রস্তুত ছিলাম না। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি সরকারকে, জুরি বোর্ডকে আর আমার শুভানুধ্যায়ীদের। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সিনেমার পুরো টিমকে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য।
প্রথম ছবির জন্য একটু ভিন্ন ধরনের গল্প নির্বাচন করেছেন। কেন?
টাঙ্গাইল শহরের বড় হলেও আমার অরিজিন কিন্তু চর এলাকায়। অনেকদিন থেকেছি চরাঞ্চলে। চরাঞ্চল নিয়ে আমি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলাম। তখন সেই অঞ্চলগুলোতে দেখেছি বায়োস্কোপওয়ালাদের। তখন আমার মাথায় আসে বিষয়টা। এরপর এই আইডিয়াটা শেয়ার করেছিলাম মাসুম রেজা ভাইয়ের সঙ্গে।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুটিং হয়েছিল একদম প্রত্যন্ত এলাকায়। সিরাজগঞ্জের এমায়েতপুরা থানার লাঙলমোড়া গ্রামে। সেখানে শুটিং করা আর শিল্পীদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। চর এলাকায় মাঝে মাঝে ধুলোর ঝড় হয়। পুরো ইউনিট নিয়ে সেই ভয়াবহ ধুলোর ঝড়ে পড়েছিলাম। তখন আমাদের ইউনিটের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই ধুলোর ঝড়ের কথা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়।
অভিনয়শিল্পীরা কেমন সহযোগিতা করেছেন?
চরাঞ্চলের ছবি এটি। এতে সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব না। তবে মাঝে মাঝে কেউ কেউ আপত্তিকর আচরণ করেছেন। আমি হাসিমুখে সব ভুলে গেছি। আমি জানি ভালো কিছু নির্মাণ করতে হলে নানা প্রতিকুলতা সহ্য করতে হয়। তেমনটাই হয়েছে আমার। তবে প্রথমবার তো, তাই বারবার হতাশ হতে হতে আবার মানসিকভাবে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছি।
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত! কী বলেন?
বাজিমাত হলো কিনা, তা বলতে পারব না। তবে আমি অনেক দরদ নিয়ে সিনেমাটা নির্মাণ করেছি। অনেক প্রতিকুলতার সম্মুখীন হয়েছি। তারপরও দমে যাইনি। তিনজন মানুষকে অবশ্যই আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। তারা আমাকে সাহস জুগিয়েছেন এগিয়ে যেতে—আমার ওস্তাদ শাহেদ শরিফ খান, আমার বাবা ডা. জি মওলা ও এই ছবির নির্বাহী প্রযোজক এম এ হোসেন মঞ্জু। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই তিনজন মানুষ আমার পাশে না থাকলে, আমাকে সাহস না দিলে, আমি ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ছবিটি নির্মাণ করতে পারতাম না।
কী ধরনের প্রতিকুলতা?
২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ মুক্তি পেয়েছিল। সারা দেশে ৪৬টি হলে ছবিটি মুক্তি পায়। মুক্তির কয়েকদিন পরে অনেক হল থেকে ছবিটি নামিয়ে দেওয়া হয়। আমি কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না। একটি মহল আমাকে নানাভাবে ভয়–ভীতি দেখায় ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করার জন্য। এমনকি একসময় তাদের উদ্যোগে ছবির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করি। আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। আমার অঙ্গনেরই কিছু মানুষ আমাকে বাঁধা দিয়েছেন। এটা খুব কষ্টে ব্যাপার ছিল আমার জন্য।
কিছু দিন আগে কলকাতার মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে নতুন ছবি নির্মাণের কথা বলেছিলেন।
কলকাতায় গিয়ে মিমির সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি খুব ব্যস্ত। তাই তাকে নিয়ে ছবি নির্মাণের ভাবনা বাদ দিয়েছি। অন্য কাউকে নিয়ে ছবি বানাব।
কী ধরনের ছবি নির্মাণ করবেন?
আমার মতে তিন ধরনের ছবি আছে। এগুলোর হল গুড ফিল্ম, হিট ফিল্ম ও ব্যাড ফিল্ম। প্রথমটি নির্মাণ করেছিলাম ‘গুড ফিল্ম’ ভাবনা নিয়ে। এবার নির্মাণ করব হিট ফিল্মের ভাবনা নিয়ে।
সেই ভাবনা কতটা এগুলো?
কাজ চলছে। গল্প, লোকেশন, অভিনয়শিল্পী আর সেটসহ নানা বিষয়ের প্রাথমিক ভাবনা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই চূড়ান্ত করতে পারব সব কিছু। তারপর বিস্তারিত জানাতে পারব।
অনেক প্রতিকুলতার পর সাফল্য এসেছে। তরুণ নির্মাতাদের উদ্যেশ্যে কিছু বলতে চান?
এখন তো ইথারের যুগ। আবেগগুলোর গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত কমে যায়। এই আবেগটা ধরে রাখার জন্য অনুরোধ করব। কাজের প্রতি শ্রদ্ধা আর পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করলে একদিন না একদিন সফলতা পাওয়া যাবেই। কাজের প্রতি দরদ প্রতিকুলতাকে ছাপিয়ে যায়।
ছবি : সংগৃহীত
‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ছবির ট্রেলার