কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা গানের কথায় তার পায়চারি। সিনেমার পথেও ঢুঁ মারেন কখনো। সহকারী পরিচালক হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত ছবি ‘কমলা রকেট’-এও গেঁথে আছে তার নাম। বলছি নিজেকে দস্যু লেখক দাবী করা জাহিদ জগৎ-এর কথা। নতুন বছরের শুরুতেই বই নিয়ে এলেন তিনি। এবার গল্পের বই। নাম ‘সাপের খামার’। অদ্বৈত থেকে প্রকাশিত বইটি এখন বাজারে। আসছে একুশে বই মেলাতেও পাওয়া যাবে এটি। নিজের কাঁধে ‘সাপের খামার’ বয়ে বেড়ানো এই গল্পকার তিন কথার উত্তর দিয়েছেন চ্যানেল আই অনলাইনকে:
গল্পের বইয়ের নাম হিসেবে ‘সাপের খামার’ নামটি কীভাবে মাথায় এলো? বা কী ভেবে এই নাম রাখলেন? এই নামটা নেয়ার পর যে ইমেজটা মাথায় ঘুরপাক খায়, এটাতো বিপজ্জনক…?
‘বিপজ্জনক’ শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ। মানে আপনার মধ্যে তৈরী হওয়া একটা ছবি আপনাকে আক্রমণ করছে। এই ছবিটাই মূলত সাপ। সাপ শুধুমাত্র একটা প্রাণী নয়, বিশেষ একটা আচরণ। এই বিশেষ’রে আমি চিনি বিষ হিসেবে। জীবন পারাপারের ক্ষেত্রে, সময়ের এইযে নিত্য দংশন, তারে পুঁজি করে যে শক্তি আমাদের চারপাশজুড়ে কথা কয়, ভালোবাসে এবং খুন করে! তারা স্পষ্টত আমার কাছে সাপ হিসেবে চিহ্নিত। তো সেই সকল সাপের সমাহারে গড়ে উঠেছে এবারের ‘সাপের খামার’। এখানে ৯টি ছোট গল্প আছে। ঠিক গল্পও না, একেবারেই ভিন্ন ঢঙয়ে, প্রতিটা শব্দের মধ্যে বিষাক্ত একেকটা দাঁত’কে দেখতে বা দেখাতে চেয়েছি। ফলে বইটা পড়ে পাঠক খুব আরাম বোধ করবেন এমন নাও হতে পারে। গল্পের বাইরে আলাদা একটা বিষক্রিয়া যেন তাড়িত করে, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে, তেমন কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করেছি। ক্ষমতার অত্যাচার, ভালোবাসার নিপীড়ন, সব মিলিয়েই মাথার মধ্যে আজ পর্যন্ত আস্তো একটা সাপের খামার নিয়েই ঘুরতে হচ্ছে আমাকে। আলাদা করে নাম দেবার দরকার হয় নি।
ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীক বই প্রকাশের হিড়িককে কীভাবে দেখেন?
এইটা একটা বাজে প্র্যাকটিস। সারা বছর বই সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা থেকে মানুষ’কে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার একটা প্রসেস মনে হয় আমার কাছে। দক্ষ প্রকাশকের অভাব এই অবস্থার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। তারা সারা বছরের জ্ঞানচর্চা’কে একমাসেই মানুষের মাথায় তুলে দেবার চেষ্টা করে থাকেন। এর বাইরে অবশ্য একটা পজিটিভ দিক আছে। সেটা হইলো, আর যাইহোক, লেখক ও পাঠকের একত্রে একটা আড্ডা দেবার উপযুক্ত ব্যবস্থা হিসেবে বেশ ভালো। এইসব ফ্যাকরা বাদ দিলে, ফেব্রুয়ারি’র অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরসাথে জড়িয়ে আছে বাংলার রক্তাক্ত ইতিহাস। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি’র বইমেলা এক অনন্য আয়োজন।
বইয়ের বিপণন নিয়ে এই সময়ের লেখকরা বেশ কনসার্ন। বিপণন নিয়ে আপনার কোনো বিশেষ কায়দা আছে কিনা?
প্রকাশিত বইয়ের বিপণনের জন্য লেখকরা উদ্যোগী হচ্ছে এটা ভালো সংবাদ। যেহেতু আজ-কালকার প্রকাশকরা সত্যিকার অর্থে দক্ষ নয়। প্রকাশিত বই কি করে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, বইয়ের কন্টেন্ট, জ্ঞান বা তার তাৎপর্য কোনকিছুই এখন আর পাঠক সহজে বুঝতে সক্ষম নয়, সেদিক থেকে লেখক নিজেই উদ্যোগী হতে বাধ্য। এতে করে লেখকের একনিষ্ঠ বিপণনী শ্রমের মধ্য দিয়ে মাছের ব্যাপারীও বইমেলায় এসে যৎসামান্য বাণিজ্য করে বেঁচে যেতে পারছে। আমার ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রকাশক নেই। শত টানা-পোড়েনের মধ্য দিয়েও সকল নিয়ম-কানুন মেনে নিজেই প্রকাশ করেছি। ফলে নিজের বই নিজের কাঁধে নিয়ে ছুটে বেড়াই দেশব্যাপী। আমার এই ছুটে চলাই আমার বইয়ের বিপণন।