দুই অ্যাশেজ প্রতিদ্বন্দ্বী এক হয়ে আগুন জ্বালান আইপিএলে। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টো। পরে বোলাররা বোঝান যে, তারাও কম যান না। পুরো দলের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আইপিএলে ইতিহাস রচনা করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দলের ইতিহাসের ম্যাচ দর্শক হয়ে দেখেন সাকিব আল হাসান। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বেঞ্চে বসে দলের ১১৮ রানের জয় দেখেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
ইংলিশ ওপেনার বেয়ারস্টোর বিধ্বংসী ৫৬ বলে ১১৪। আর ওয়ার্নারের মারকাটারি ৫৫ বলে অপরাজিত ১০০। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে পাহাড়সম রানের বোঝা চাপিয়ে দেয় সানরাইজার্স। মূলত দুই ওপেনারের ১৮৫ রানের জুটিতে ভর করে চলতি আইপিএলে সর্বোচ্চ ২৩১ রানের স্কোর খাড়া করে হায়দরাবাদ।
তবে জবাব দিতে নেমে ব্যাঙ্গালোরের বোলারদের চেয়ে বাজে অবস্থা ব্যাটসম্যানদের। কোহলি-ডি’ভিলিয়ার্সদের চরম ব্যর্থতায় লজ্জার হার দেখতে হয় দলকে। ব্যাঙ্গালোর শেষ পর্যন্ত অলআউট হয় ১১৩ রানে।
বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয় ব্যাঙ্গালোরের। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৩৫ রানে নেই ছয় উইকেট। কোহলি-ডি’ভিলিয়ার্স ফিরে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক-ঘরোয়া মিলিয়ে টি-টুয়েন্টি সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল। তবে সেটা হতে দেননি কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। দলের মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছেন। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন কিউই অলরাউন্ডার। বাকি তিনজনের অবশ্য কেউই কুড়ির ঘর মাড়াতে পারেননি।
সানরাইজার্সের হয়ে চার ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে চার উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি। এছাড়া ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন সন্দ্বীপ শর্মা। বাকি তিন ব্যাটসম্যান হন রানআউট।
দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবকে বসিয়ে একাদশে ফেরানো হয় কেন উইলিয়ামসনকে। আর এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের জায়গায় আসেন নবি। ম্যাচ শেষে যা পারফরম্যান্স, তাতে সাকিব তো বটেই একাদশে ফেরা কঠিন হবে উইলিয়ামসনেরও।
এর আগে টসে জিতে এদিন প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু শুরু থেকেই কার্যত কোহলির সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে দিতে থাকেন দুই সানরাইজার্স ওপেনার বেয়ারস্টো-ওয়ার্নার। আরসিবি বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেন সানরাইজার্সের অজি-ইংলিশ ওপেনিং জুটি। প্রথম দু’ম্যাচেও ওপেনিংয়ে শতরানের গন্ডি পেরিয়েছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে আগের সব ছাপিয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠেন বেয়ারস্টো-ওয়ার্নার।
৫৬ বলে বেয়ারস্টোর ১১৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস সাজানো ছিল ১২টি চার ও ৭টি ছয়ে। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চলতি আইপিএলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করে ইংলিশ তারকা ব্যাটসম্যান যখন আউট হন, দলের রান তখন ১৮৫। তানা তৃতীয় অর্ধশতরান পূর্ণ করলেও ওয়ার্নার শতরান পাবেন কিনা, নিশ্চিত ছিলেন না স্টেডিয়ামে উপস্থিত সমর্থকরা। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা বিজয় শঙ্কর ৩ বলে ৯ রান করে ফিরে গেলেও ইউসুফ পাঠানকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ শতরান পূর্ণ করেন ওয়ার্নার।
শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে পাহাড়প্রমাণ ২৩১ রানে পৌঁছে দেন ওয়ার্নার। তার ইনিংস সাজানো ছিল ৫টি চার ও ৫টি ছয়ে। ২০১৬তে গুজরাট লায়ন্সের বিরুদ্ধে কোহলি-ডি’ভিলিয়ার্সের পর একই ইনিংসে জোড়া শতরানের সাক্ষী থাকল টি-টুয়েন্টি লিগ।
বল হাতে আরসিবির হয়ে অভিষেকটা সুখের হয়নি সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএল খেলা বাঙালি প্রয়াস রায় বর্মনের। ৪ ওভারে অভিষেকে ৫৬ রান খরচ করেন তিনি। উমেশ যাদব কিংবা যুজবেন্দ্র চাহালের অবস্থাও নাজুক। ৪ ওভারে তারা দেন যথাক্রমে ৪৭ রান ও ৪৪ রান।