চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাধারণ মানুষেরা বাবাকে ভুলতে দেয়নি: দিলদারের মেয়ে

চলচ্চিত্রের মানুষেরা বাবাকে ভুলে গেলেও সাধারণ মানুষেরা বাবাকে ভুলতে দেয়নি: দিলদারের মেয়ে

বাংলা সিনেমায় ক্ষণজন্মা নাম দিলদার। যিনি নানামাত্রিক ভঙ্গিতে কৌতুক অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে হাসির খোরাক জোগাতেন। সিনেমায় দিলদারের উপস্থিতি মানেই বাড়তি আনন্দ। আশি-নব্বই দশকে বেশিরভাগ সিনেমায় তিনি ছিলেন। নায়ক-নায়িকা ভিন্ন হলেও দিলদার ছাড়া যেন সিনেমাই জমতো না! কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মবার্ষিকী সোমবার (১৩ জানুয়ারি)। ১৯৪৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মেছিলেন। 

১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন তিনি। এরপর বেদের মেয়ে জোসনা, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, কন্যাদান, চাওয়া থেকে পাওয়া, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গাড়িয়াল ভাই, বাশিওয়ালা সিনেমার অভিনয় করে ধীরে ধীরে দিলদার হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতা। দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, সেই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তাকে ‘নায়ক’ বানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’  নামে একটি সিনেমা।

স্ত্রীর সঙ্গে অভিনেতা দিলদার…

শুধু তাই নয়, এমন অসংখ্য সিনেমা ছিল, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার দিলদারের কথা ভেবেই গল্প লিখতেন। তুমুলভাবে জনপ্রিয়তার আসনে থেকে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে দিলদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজও টিভি কিংবা ইউটিউবে দিলদারের সিনেমা দেখার সময় দর্শক তাকে ‘মিস করেন’!

এখনো অনেককেই হতাশ কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘দিলদার গেলেন, তার মতো কেউ আর এলেন না!’

বাংলা সিনেমাকে যিনি অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেলেন মৃত্যুর পর তার পরিবার-পরিজন কে কোথায়, কোন অবস্থায়, কেমন আছেন-এই খোঁজটুকু নেয়নি চলচ্চিত্রের দায়িত্বশীল কেউ ই! এমন চাপা কষ্টের কথা জানিয়েছেন দিলদারের কনিষ্ঠ কন্যা জিনিয়া আফরোজ।

সোমবার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে দিলদার কন্যা জিনিয়া বলেন: আব্বা মারা যাওয়ার পর আমাদের খোঁজ নেয় না কেউ। কখনও যদি কোনো কারণে দেখা হয়ে যায়, তখন লোক দেখানোর জন্য খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এগুলো আর্টিফিসিয়াল মনে হয়। এমনও হয়েছে, দরকারে সিনেমা অঙ্গনের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলেও তারা এড়িয়ে গেছেন।

সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে দিলদার

উদাহরণ টেনে দিলদার কন্যা বলেন, ২০১৮ সালে শিল্পী সমিতিতে একবার একটা কাজে গিয়েছিলাম। দিলদারের মেয়ে শুনে মুখে মুখে শুধু কথা বলেছিল, এরপর যে দরকারে গিয়েছিলাম সেটার সমাধান দিতে পারেনি ওখান থেকে। এরপর থেকে আর যাইনি, কেউ খোঁজও নেয়নি।

তিনি বলেন: কৌতুক অভিনেতা আনিস আঙ্কেল বাবার অনেক কাছের বন্ধু ছিলেন। আমাদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনিও বেঁচে নেই। নায়ক মান্না বেঁচে থাকাকালীন আমাদের টুকটাক খবর নিতেন। এখন কেউ খোঁজ নেয় না। তবে আব্বা বিএনপি’র জিসাস (জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ)-এর সভাপতি ছিলেন। মারা যাওয়ার পর প্রথম তিন-চার বছর সংগঠনটি আব্বার মৃতুবার্ষিকী পালন করতো। আজকাল আর কেউ মনে রাখে না। নূন্যতম খোঁজ-খবরও নেয়না কেউ।

সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে দিলদার

দিলদার কন্যা জিনিয়া আফরোজ বলেন: আমাদের এখন যা কিছু আছে সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। ওনারও বয়স হয়েছে ৬৫ বছরের কাছাকাছি। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাঁকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আমার তো কোনো ভাই নেই, তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়। মা থাকেন ডেমরা একালায়। আব্বা যা আয় করতেন ওখান থেকে টাকা জমিয়ে সারুলিয়া (ডেমরা) তে একটা পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। এখন চারতলা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া এবং পাঁচ তলায় মা থাকেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর এবং ঢাকায় আমাদের দু-বোনের কাছেও থাকেন।

দিলদারের জন্মবার্ষিকী স্মরণ করে তার মেয়ে জিনিয়া আফরোজ বলেন: আমার বড় বোন নিকেতনে থাকেন। উনি ডেন্টিস্ট! আমি দুই সন্তান নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকছি। ডেমরাতে মায়ের কাছে যখনই যাই সেখানকার সানারপাড় এলাকায় বাবার কবর জিয়ারত করি। এবারের জন্মদিনে বাদ আসর সেখানে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী দুই সময়েই প্রতিবছর দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়। বিশেষ এ দিন নয়, সবসময় বাবার কথা মনে পড়ে। আমার যখন বয়স ২৫, তখন উনি চলে যান। আব্বা অল্প বয়সে মারা গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের জীবনটা হয়তো আরও বদলে যেত।

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া

তিনি বলেন: আব্বার চলে যাওয়ায় তার অভাব শুধু আমরা নই, পুরো দেশের চলচ্চিত্র প্রিয় মানুষরা অনুভব করেন। আব্বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তার মূল্যায়ণে তাকে দেশের মানুষ মনে রেখেছে এটাই তার সন্তান হিসেবে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে হয়। কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জ গিয়েছিলাম। সেখানে মানুষ যখন জানতে পারে, আমি দিলদারের মেয়ে তখন তারা আমার সঙ্গে ছবি তোলে। চলচ্চিত্রের মানুষেরা বাবাকে মনে রাখুক বা নাই রাখুক, সাধারণ মানুষ বাবাকে ভুলতে দেয়নি এটাই তার সন্তান হিসেবে আমাদের পরম পাওয়া।