যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে বহু বছর পর প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে একটি যাদুঘর। তেলখনি সমৃদ্ধ শহর বসরায় দেশটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের নিদর্শন নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দর্শনার্থীদের জন্য নিজের দরজা খুলে দেয় বসরা মিউজিয়াম।
কিন্তু শুধু এত বছর পর নতুন যাদুঘর হিসেবে চালু হওয়ার কারণে নয়, আরও একটি কারণে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে এটি। যাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইরাকের প্রাক্তন স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদে।
প্রায় ১শ’ তাকার মতো রাজকীয় প্রাসাদটি সাদ্দাম হোসেন তার শাসনামলে হ্রদের পাশে নির্মাণ করেন। যাদুঘরের পরিচালক ক্বাহতান আল-ওবাইদ বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, “স্বৈরাচার আর নৈরাজ্যের জায়গায় সভ্যতা আর মানবতাকে বসানোর জন্য” তিনি ইচ্ছে করেই প্রাসাদটি বেছে নিয়েছেন।
ইরাকের নাম শুনলেই আমাদের এখন মনে পরে জঙ্গি সংগঠন আইএস, সহিংসতা, যুদ্ধ, বোমা আর রাসায়নিক অস্ত্রের কথা। দেশটির যে একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, এমনকি এটি যে সভ্যতার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্র, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা আর চিকিৎসাবিদ্যার জন্মস্থল – আমরা সেটা ভুলতে বসেছি। এই দেশটিতে ছিল একের পর এক প্রাচীন সাম্রাজ্যের অবস্থান। যারা বিজ্ঞান, শিল্প আর স্থাপত্যে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
“কিন্তু যুদ্ধের কারণে ১৯৮০ থেকেই আমরা ভুগছি… গণমাধ্যম আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেশটির ইতিহাস দেখানোর বদলে খারাপ দিকগুলোর দিকেই বারবার ফোকাস করে এসেছে,” বলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে অনুবাদক হিসেবে কাজ করা ইরাকি ইয়াজান ফাদলি।
নতুন যাদুঘরটি পরিস্থিতি পরিবর্তনের একটি চেষ্টা বলে মনে করেন তিনি।
বসরা মিউজিয়াম দীর্ঘ আট বছরের এক প্রকল্পের ফল। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে সবাইকে জানানো এবং বসরার সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। যথেষ্ট অর্থ না থাকায় একটি প্রদর্শনকক্ষই কেবল চালু করা গেছে। সেখানে আছে দু’হাজার বছরেরও বেশি পুরনো বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। যার মধ্যে রয়েছে বসরায় তৈরি রূপোর মুদ্রা, মাটির সরঞ্জাম, কফিন এবং টাইলস।
যাদুঘরটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে আরও তিনটি প্রদর্শনী হল এর সঙ্গে যুক্ত হবে। সেগুলোতে থাকবে ইরাকের ব্যাবিলনীয়, আসিরীয়, সুমেরীয় এবং ইসলামি সময়কালের সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার নিদর্শন।