চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাদাদের ইতিহাসে ‘কালো’ কমলার উত্থান

কমলা হ্যারিস। স্বাধীন আমেরিকার ২৪৪ বছরের ইতিহাসে অনেক কিছুতেই প্রথম। দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। এই পদে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গও তিনি। আবার তিনিই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার আগে সবচেয়ে কম বয়সী সিনেটরও এই নারী। সাদাদের সুদীর্ঘ ইতিহাসে প্রাণোচ্ছল হাসির কমলার উপস্থিতি সমুজ্জ্বল।

কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাট দল থেকে মার্কিন মুল্লুকের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন শুরুতে। পরে তিনি হয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের রানিংমেট তথা ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী।

এর মধ্য দিয়ে টিকে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার নির্বাচনে লড়াইয়ের মাঠে। শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট।

একজন উদীয়মান রাজনীতিক হিসেবে কমলা হ্যারিস আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালের শুরুর দিকে, যখন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর থেকে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম তালিকাভুক্ত করেন।

একজন কৃষ্ণাঙ্গ, বাগ্মি ও উদার রাজনীতিবিদ হিসেবে উদারপন্থীদের কাছে সেরা পছন্দ কমলা। সেই সুযোগেই তিনি মনোনয়নের লড়াইয়ে নামেন। কৌশলী বক্তৃতা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা দিয়ে সামনে চলে আসেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন ডেমোক্র্যাট দলের অপর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের।

কিন্তু সুস্পষ্ট কিছু বিষয়ে যৌক্তিক ধারণা উপস্থাপন করতে না পারায় তিনি জো বাইডেনের কাছে হেরে যান। তাই আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে আগানো সম্ভব হয়নি তার। কিন্তু জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন তারই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকেই।

কমলা হ্যারিসের পথচলা-
বিবিসি বলছে, ডেমোক্র্যাট দলের নেতা কমলা হ্যারিসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে। বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন জ্যামাইকান। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। মা শ্যামলা গোপালন হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ক্যান্সার গবেষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী।

কমলার অল্প বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তার বোন মায়াসহ বড় হন মায়ের কাছে। ভারতীয় মায়ের সংস্পর্শে বড় হলেও কমলা হ্যারিস বলছেন, মেয়েদের জন্য তার মা ভারতীয় নয়, কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকান সংস্কৃতিকে বেছে নেন।

কমলা হ্যারিস তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আমার মা বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি দুজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে বড় করছেন। তিনি জানতেন, তার মেয়ে মায়া ও আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখবে আমেরিকা, আর তাই আমাদের গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ফলে কমলা নিজেকে একজন আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য ও গর্ববোধ করেন।

মা ও ছোট বোনের সঙ্গে কমলা

শিক্ষা ও কর্মজীবন
জীবনের শুরুর দিকে কিছু অংশ কমলা হ্যারিস কানাডায় অতিবাহিত করেন। তখন তার মা গোপালন ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। সে সময় কমলা ও তার বোন কানাডার মন্ট্রিয়েলের স্কুলে পাঁচ বছর পড়ালেখা করেন।

পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়লেখা করেন কমলা। হাভার্ডে চার বছর শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর আলামিডা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। দায়িত্ব পালন করেন সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির। এখান দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে খ্যাতি অর্জন করেন কমলা।

রাজনীতিতে পদচারণা
একজন দক্ষ আইনজীবীর সুনাম অর্জনের মধ্যদিয়ে তার পথচলা শুরু হয় রাজনীতিতে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের সময় সিনেটের শুনানি চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী ও কর্মকর্তাদের কঠোর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করায় উদারপন্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। তরুণ রাজনীতিক হিসেবে ডেমোক্র্যাট দলে তার জায়গা হয়ে যায় সে সময়। খ্যাতির ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ডেমোক্র্যাট দল থেকে মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে স্থান করেন নেন।

কর্মজীবন ও রাজনীতির প্রথম থেকেই তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিগুলোর সমালোচনা করেছেন। তিনি পুলিশি সংস্কার, মাদক সংস্কার, শিশু অধিকার বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদী ছিলেন এবং আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন কমলা। বর্ণবৈষম্য নিয়ে তার ছিলো উদাত্ত কণ্ঠস্বর।

এভাবে মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি নির্বাচিত হন ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সিনেটর। আর সেই সিনেটর থেকে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নাম লেখান। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইতে নামেন। শেষ পর্যন্ত জয় তার হয়ই।  তিনি হন আমেরিকার প্রথম নির্বাচিত নারী ও একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট। 

হবেন প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট?
মার্কিন নির্বাচনে দু’একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া বিজয়ী দলের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে ভাইস প্রেসিডেন্টই সাধারণত ওই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। মার্কিন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়ে বলছেন, বাইডেনের মেয়াদ শেষে তাকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করবে ডেমোক্রেটিক পার্টি। আগামীর সেই নির্বাচনে জয়ী হলে কমলা হ্যারিসই হবেন প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট।