চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাদক্বাতুল ফিতর

‘সাদক্বাতুল ফিতর”। দুইটি আরবী শব্দ। সাদক্বাহ শব্দার্থ দান, ফিতর দ্বারা বুঝায় ঈদুল ফিতর। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, ঈদুল ফিতরের দিনে যে সাদক্বাহ করা হয় সেটাই সাদক্বাতুল ফিতর। এটাই হচ্ছে মূল কথা। সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার গিরিপথগুলোতে একজন ঘোষককে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন যে, সাদক্বাতুল ফিতর প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব। চাই সে নর কিংবা নারী, স্বাধীন অথবা দাস, ছোট বা বড়” (তাহাবী শরীফ, বাবু মিক্বদারু সাদক্বাতুল ফিতর)।

যাদের উপর ওয়াজিব:
প্রতিটি স্বাধীন মুসলমানের উপর সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোনো নিসাব নির্ধারিত নেই। যার নিকট একদিন এক রাতের খাবার বিদ্যমান তার উপরই সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব।
মালিক নিজের পক্ষ থেকে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করবে এবং তাঁর অধীনে থাকা সকলের সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করবে।

এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “কারও উপর এমন লোকদের সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় যাদের ভরণ-পোষণ সে গ্রহণ করে এবং যাবতীয় খরচের জিম্মাদারীও তার উপর ন্যস্ত থাকে” (তিরমিযী শরীফ)। পিতা তার নাবালিগ সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। বালিগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে পিতা সন্তুষ্ট চিত্তে দিলে আদায় হবে। তেমনি স্বামীর উপর স্ত্রীর ফিতর আদায় ওয়াজিব নয়। দিলে আদায় হয়ে যাবে। আপন পরিবারভুক্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে অনুমতি ব্যতীত ফিতরা দিলে আদায় হবে না। পরিবারের বহিরাগত কারো ফিতরা দিতে হলে তার অনুমতি লাগবে।

ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার সময়:
ঈদুল ফিতরের দিনে সুবহে সাদিক হবার পর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্বে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে ঐ মৃত ব্যক্তির উপর ফিতরা ওয়াজিব নয়। সুবহে সাদিকের পর কোনো সন্তান ভূমিষ্ট হলে কিংবা কোনো ব্যক্তি মুসলমান হলে তার উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। তদ্রুপ কোনো দরিদ্র ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে ধনী হলে তার উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। ধনী ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পূর্বে দরিদ্র হলে তার উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। অর্থ্যাৎ একজন স্বাধীন মুসলমানের উপর সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য ‘সুবহে সাদিক’ শর্ত। ‘সুবহে সাদিক’ আগমনের পর ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।

সাদক্বাতুল ফিতর আদায়ের পদ্ধতি:
বিভিন্ন হাদিস শরীফ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রব্য অনুযায়ী এক ‘সা’ কিংবা অর্ধ ‘সা’ এর সমপরিমাণ যে কোনো হালাল দ্রব্য দ্বারা সাদক্বাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা প্রতিটি দাস ও স্বাধীন ব্যক্তি এবং ছোট ও বড় এর পক্ষ থেকে অর্ধ সা গম অথবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা যব আদায় করো” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)।

গম, গমের আটা, যব, যবের আটা এবং খেজুর ও কিসমিস দ্বারা সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম এবং যব কিংবা যবের আটা, খেজুর দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করলে এক সা অর্থ্যাৎ ৩ কেজি ৩২৫ গ্রাম দিতে হবে। খেজুর, গম, যব, কিসমিস ইত্যাদি দ্বারা ছাড়া অন্যান্য দ্রব্য দ্বারাও সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা যায়। তবে এক ‘সা’ ও অর্ধ ‘সা’ এর পরিমাপের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা জরুরী। সামর্থ্য অনুযায়ী সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করাটাই মুত্তাকী মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম : ই.ফা.বা.)।

সাদক্বাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলত:
সাদক্বাতুল ফিতরের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষ্য পাওয়া যায়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। রোজাদারের ভুল-ক্রুটি মার্জনার জন্য এবং দরিদ্র মিসকীনদের খাদ্যাভাব দূরীকরণের জন্য (মিশকাত শরীফ)।

অন্যত্রে পাওয়া যায়, হযরত ওয়াকী ইবনুল জাররাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রমজানের জন্য সাদক্বাতুল ফিতর নামাজে সাহু সিজদার ন্যায়। নামাজের ত্রু টি যেমন সাহু সিজদা দূরীভূত করে তদ্রুপ রোজাদারের রোজা পালনে ভুল-ত্রু টি, গাফিলতি ইত্যাদি দুর করে সাদক্বাতুল ফিতর (গুনিয়াতুত তালেবীন)।

রোজাদারের জন্য সাদক্বাতুল ফিতর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রোজাদারের রোজাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সকল প্রকার ভুল-ত্রু টি থেকে হেফাজত করতেই স্রষ্টার পক্ষ থেকে এই অনন্য আয়োজন। রোজাদারের রোজার হেফাজত হচ্ছে। পাশাপাশি অসহায় মিসকীনদের খাদ্যাভাব দুর হচ্ছে। হাসি ফুটছে সকলের মুখে। ইসলাম কত সুন্দর! কত সুশৃঙ্খলতায় আবদ্ধ প্রতিটি হুকুম। একেকটি হুকুমের পিছনে স্রষ্টার নানান উদ্দেশ্য। সকল কিছুই আমাদের জন্য। রোজাদের জন্য। মুসলমানের জন্য। সর্বোপরি মানুষের জন্য। বলা যায়, ‘ভাতৃত্ববোধ’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘সাদক্বাতুল ফিতর’