নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় দু’টি মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন, কর্নেল সাঈদ, মেজর আরিফ, মেজর রানাসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং যাবজ্জীবনসহ ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতের কার্যদিবস শুরু হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সকাল ১০.০৫টার দিকে মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। দু’টি মামলার ঘটনা এবং আসামি একই হওয়ায় দু’টিকে একটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে বলে রায় ঘোষণার সময় বলেন বিচারক।
রায় ঘোষণার পরই আদালতে উপস্থিত নূর হোসেনসহ অন্যান্য আসামিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াৎ হোসেন খান এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানান তিনি। আইনজীবী বলেন, বাদীপক্ষ এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার পেয়েছে। এই রায়টি নারায়ণগঞ্জে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে বলে জানিয়ে রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে উপস্থিত জনগণও এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে রায় কার্যকর এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের নৃশংস ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান, উচ্চ আদালতেও যেন এই রায় বহাল থাকে। রায়ের পর নিজ পরিবারসহ বাকি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণসহ পুরো শহরেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার আইনজীবী ও গণমাধ্যমের কোনো গাড়িও আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এরআগে কাশিমপুর কারাগারে থাকা ৭ খুন মামলার ৩ জনসহ সব আসামিকে থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই মামলার চার্জশিটে ৩৫ জন অভিন্ন আসামি, তাদের মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার ও ১২ জন পলাতক রয়েছে।
৭ খুনের ঘটনায় দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম আগেই শেষ হয়েছিল। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
তদন্তকারীরা প্রধান আসামি নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক ৩ কর্মকর্তাসহ ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের পর সর্বশেষ যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের দিন ঠিক করেছিলেন। ৩০ নভেম্বর ২০১৬ দু’টি মামলায় র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ আটক সব আসামির উপস্থিতিতে আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছিল।
৩৫ জনকে আসামি করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলাটির চার্জশিট গঠন করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে ১৬জনই র্যাব সদস্য। পলাতক ১২ জনের মধ্যে র্যাব সদস্য ৮ জন। যে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়েছে তারা ইতোমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বিকেলে অপহৃত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জন। তিন দিন পর তাদের মরদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর শান্তির চর এলাকায়।