নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুইটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদী
নিহত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পালের জেরা শেষ হয়েছে।
আদালত আগামী ১৪ মার্চ পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য
করেছেন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বাদী বিজয় কুমার আদালতে সাক্ষী দেন। তারপর ২২ জন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। আজ ১১ জন আসামীর পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা সম্পন্ন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার সকাল দশটার দিকে মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামীকে জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়।
সাড়ে দশটায় বাদী বিজয় কুমার পালকে জেরা শুরু হয়। বেলা বারোটা পর্যন্ত জেরার পর আসামীপক্ষের আইনজীবীরা সাত খুন মামলা স্থগিত করতে হাইকোর্টের আবেদনের আদেশ আজ আসার কারণ দেখিয়ে আদালতে সময় চাইলে বিচারক দুপুর তিনটা পর্যন্ত জেরা মুলতবি করেন।
পরবর্তী সাক্ষ্য ১৪ মার্চ: বিকেল তিনটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ওই আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের কোনো আদেশ দেখাতে ব্যর্থ হলে বাদীকে জেরা করতে অসম্মতি জানায়। পরে আদালত বাদীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ করে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৪ মার্চ নির্ধারন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত ২৩ এবং পলাতক ১২ আসামীর মধ্যে ২২ জন আসামীর আইনজীবী বাদীকে জেরা করেছেন। আজ ১৩ জন আসামীর পক্ষে জেরা করার কথা থাকলেও ১১ জনের পক্ষে আইনজীবীরা জেরা করেন।
তিনি বলেন, আদালত দুই দফায় তাদেরকে (আসামীপক্ষের আইনজীবী) সময় দিয়েছেন। তারেক সাঈদ এবং নূর হোসেনের পক্ষে কোনো আদেশ দেখাতে ব্যর্থ হলে আদালত তাদেরকে সাক্ষীকে জেরা করতে বলেন। কিন্তু আসামীপক্ষের আইনজীবীরা তাতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর আদালত আইনগত একটি আদেশ দিয়ে বলেন, পরবর্তীতে নতুন করে এই বাদীকে জেরা করার আর কোন সুযোগ থাকবে না। এরপর ১৪ই মার্চ মামলার দিন ধার্য করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াৎ হোসেন খান জানান, আসামীপক্ষ থেকে আদালতকে বারবার হাইকোর্ট থেকে মামলার স্থগিতাদেশ নির্দেশনার কথা জানালেও তারা কোন নির্দেশনা দেখাতে পারেনি। যে কারণে আদালত আগামী ১৪ মার্চ মামলার অন্যান্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, আসামী নূর হোসেন এবং তারেক সাঈদের পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। সেখানে একটি কারণ দেয়া হয় যে আজকে উচ্চ আদালতে তাদের বিষয়টি নিয়ে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, সেটি আজকে আদেশের জন্য আছে এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে আইনজীবীরা একটি সার্টিফিকেট দিয়ে সময়ের আবেদন করেন।
‘আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে যেহেতু উনারা বলেছিলেন দুইটার সময় আদেশ হবে, আরও একঘন্টা বাড়িয়ে তিনটার সময় এই জেরার সময় নির্ধারণ করেন। তিনটার সময়ও উনারা হাইকোর্টের কোনো আদেশের কথা বলতে পারে নাই।’
বিচার বিলম্ব: মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল জেরা শেষে অভিযোগ করেন, আসামীপক্ষ থেকে মামলাটির বিচারে বিলম্ব করা হচ্ছে। তিনি দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করার দাবী জানান।
নিহত চন্দন সরকারের জামাতা ডা: বিজয় কুমার পাল বলেন, আমরা বাদী হিসেবে একটা সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার চাচ্ছি। সাক্ষ্যগ্রহণটা একটু দেরি হচ্ছে। আমাকে তিনদিন আসতে হলো। এটা একটু তাড়াতাড়ি শেষ হতে পারতো।
অন্য মামলার বাদী বিউটির অসমাপ্ত জেরা ১০ মার্চ: এর আগে গত ৩ মার্চ নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা অপর একটি মামলায় বিউটির সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করা হয়। আগামী ১০ মার্চ তাকে পুনরায় জেরা করা হবে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম তার তিন বন্ধু তাজুল ইসলাম, লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন ও গাড়ির জাহাঙ্গীর চালক এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দ্রন সরকার ও তার গাড়ি চালক ইব্রাহিমকে অপহরণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দেয়। এর তিনদিন পর নদীতে ওই সাতজনের মরদেহ ভেসে ওঠে।