বাংলাদেশের মত দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। প্রায় ৭ বছর হয়ে গেলো এখনও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারলো না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এর চেয়ে বড় তামাশা আর কী হতে পারে?
নির্ধারিত দিন থাকার পরও আজকেও আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। এ নিয়ে ৬১ বারের মতো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছালো। আগামী ৯ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত করছে এলিট ফোর্স হিবেসে পরিচিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। দুঃখজনক হলেও গত ৭ বছরেও এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তারা।
আমরা জানি, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজেদের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরে বাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেই থেকে র্যাব এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনও যেন সময়ের সাথে বিচারহীনতায় স্তিমিত হয়ে আসছে। বিচারের দাবিতে সোচ্চার সাংবাদিকদের কণ্ঠগুলো কেবল সোচ্চার হয় এই দম্পতির মৃত্যুদিন এলেই।
অনেকে মনে করেন, খুনিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। কারণ বাংলাদেশের আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী চাইলেই দোষীদের আইনের আওতায় আনা যায়- এমন দৃষ্টান্ত নতুন নয়। অথচ অদৃশ্য কোনো কারণে সাগর-রুনি হত্যা রহস্য চাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এ মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো না কোনো বাধা আসছে। ৭ বছরেও তদন্ত কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়া এটাই প্রমাণ করে। এভাবে যদি বছরের পর বছর তদন্ত প্রতিবেদন জমা না পড়ে; আমরা যে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ভুগছি, তার স্বপক্ষে শক্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।