চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সাকিব, ম্যাথিউসে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ আশা দীপ্যমান

ক্রিকেট খেলায় বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে নৈপুণ্য দেখায় অলরাউন্ডাররা। তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকে একটি ম্যাচে দুই ক্ষেত্রে অবদান রাখতে না পারলেও অন্তত একটি ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখার।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলরাউন্ডার, বিশেষ করে এদের মধ্যে ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়রা বিরল শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।

খুব বেশি দিন আগে নয়, সাউথ আফ্রিকার জ্যাক কালিস, শ্রীলঙ্কার সানাথ জয়সুরিয়া, সাউথ আফ্রিকার শন পোলক, ইংল্যান্ডের এন্ড্রু ফ্লিনটফ এবং আবারও সাউথ আফ্রিকার লেন্স ক্লুজনারদের মতো অলরাউন্ডাররা ব্যাট এবং বলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তাদের প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে দিতেন।

ক্রিকেটে কিছু ক্ষেত্রে সেরকম কার্যকরী ভিন্নতা এখনও পরিলক্ষিত হলেও যারা কিছু অবদান রাখেন বা দক্ষতা দিয়ে অন্যদের সাহায্য করেন তারা দলের জন্য নিয়মিত ম্যাচ জেতানোর মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না।

বর্তমান সময়ের অলরাউন্ডার মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনার, ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, ভারতের রাভিন্দ্রা জাদেজা এবং সাউথ আফ্রিকার জেপি ডুমিনি।

এদের সবাইকে ছয় অথবা সাত নম্বর পজিশনে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরা মনে করা হয় এবং একজন কার্যকরী পঞ্চম বা ষষ্ঠ বোলার হিসেবেও অবদান রাখেন তারা।

তারা ম্যাচ জেতাতে পারলেও তাদের পূর্বসুরিদের মতো নিশ্চয়তা বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ব্যর্থ।

অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে বড় সংস্করণের অভিজাত খেলাটি আরও একজন অলরাউন্ডারের বিদায় প্রত্যক্ষ করলো। ওয়াটসনের দখলে আছে আন্তজার্তিক খেলার তিনটি সংস্করণ মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি রান এবং ২৫০ এরও বেশি উইকেট। তবে ছোট সংস্করণেই বেশি সাফল্য পেয়েছেন ওয়াটসন।

২০১৪ সালে জ্যাক ক্যালিসের অবসরের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাফল্যের বিচারে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারকে হারায় ক্রিকেট বিশ্ব। নিজের সেরা সময়ে ক্যালিস সাউথ আফ্রিকার ব্যাটিং দলের অন্যতম ভরসা ছিলেন এবং চারজন প্রধান পেস বোলারদের একজন ছিলেন তিনি।

মোট ৪৯৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যারিয়ারে ক্যালিস ২৪ হাজার ৮৬৮ রান এবং ৫৬৫ উইকেট সংগ্রহ করেন (১৬৬ টি টেস্ট এবং ৩২৮ টি ওয়ানডে)। এর মধ্যে রয়েছে ৬২ টি সেঞ্চুরি (টেস্টে ৪৫ টি এবং ওয়ানডেতে ১৭ টি)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডারের এই অর্জনই শ্রেষ্ঠ।

ক্যালিসের অসাধারণ রেকর্ডের ধারেকাছে আসতে পেরেছেন খুবই কমসংখ্যক ক্রিকেটার। অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রাখা কিংবদন্তী ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গ্যারি সোবার্সের পরেই ক্যালিসকে বিবেচনা করা হয়। গ্যারি সোবার্স ছিলেন তার সময়ে সবচেয়ে বিধ্বংসি ব্যাটসম্যান এবং তার উইকেট শিকারের সংখ্যাও প্রচুর।

৯৩ টেস্ট খেলে অবসরে যাওয়া সোবার্সের ক্যারিয়ারে ৮ হাজার ৩২ রান এবং ২৩৫ উইকেট সংগ্রহ করেন। সোবার্সের ঝুলিতে আছে ২৬টি শতক এবং ছয়বার পাঁচ উইকেট শিকারের রেকর্ড।

৮০‘র দশকে সোবার্সের মতো কিংবদন্তিতুল্য উজ্জ্বল নক্ষত্রদের মধ্যে ক্রিকেট পেয়েছিলো ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি, পাকিস্তানের ইমরান খান এবং ভারতের কপিল দেবকে, যারা ছিলেন তাদের দলের প্রধান ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়, যা তারা নিয়মিতই করতেন।

কিন্তু এমন নিখাঁদ অলরাউন্ডার এই সময়ে খুবই বিরল। যে কারণে যেসব ব্যাটসম্যান পার্ট-টাইম বোলার এবং যেসব বোলার ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে পারেন তাদের অলরাউন্ডার হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

ভারতীয় ক্রিকেট পরবর্তী আরেকজন কপিল দেবকে পাওয়ার দীর্ঘদিনের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। উদাহারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় অজিত আগারকার, রিতিনদার সোধি, রবিন সিং এবং অতি সাম্প্রতিক সময়ের ইরফান পাঠানের নাম।

বর্তমান সময়ে অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে, যার দখলে আছে দুইটি টেস্ট শতক। অশ্বিনকে অলরাউন্ডার বিবেচনা করার প্রবণতা ভারতে অলরাউন্ডারদের অভাবের চিত্রই প্রকট করে তোলে।

আরো একজন স্পিন বোলার এবং ব্যাটসম্যান রবিন্দ্রা জাদেজা এখনও ক্রিকেটের তিনটি সংস্করণে মূল একাদশে থাকা নিশ্চিত করতে পারেননি।

টি-২০ খেলার উদ্ভব ব্যাট-বলে অবদান রাখা আরো নতুন নতুন খেলোয়াড় তুলে আনার হারকে ত্বরান্বিত করবে বলে প্রত্যাশা করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা টেস্ট ক্রিকেটের মতোই একটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের জায়গা হয়ে উঠছে।

১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচগুলো অনেক সেরা অলরাউন্ডারের জন্ম দিতে পারলেও এখন তারা সবাই অবসরে চলে গেছেন।

তবে এখন ব্যতিক্রমী কয়েকজনের মধ্যে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং শ্রীলঙ্কার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সে নিজেদের উচ্চতর আসনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ক্রিকেটে শিগগিরই অলরাউন্ডাররা বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হবেন না, এই আশার প্রদীপ এখনও দীপ্তমান রেখেছেন সাকিব-ম্যাথিউসরা।

বিখ্যাত অলরাউন্ডারদের রেকর্ড: (টেস্ট)
জ্যাক ক্যালিস: ১৬৬ ম্যাচ, ১৩২৮৯ রান, ২৯২ উইকেট, ৪৫ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার পাঁচবার।
গ্যারি সোবার্স: ৯৩ ম্যাচ, ৮০৩২ রান, ২৩৫ উইকেট, ২৬ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ছয়বার।
কপিল দেব: ১৩১ ম্যাচ, ৫২৪৮ রান, ৪৩৪ উইকেট, ৮ শতক এবং এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার ২৩ বার।
রিচার্ড হ্যাডলি: ৮৬ ম্যাচ, ৩১২৪ রান, ৪৩১ উইকেট, ২ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ৩৬ বার।
ইয়ান বোথাম: ১০২ ম্যাচ, ৫২০০ রান, ৩৮৩ উইকেট, ১৪ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ২৭ বার।

একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ
জ্যাক ক্যালিস: ৩২৮ ম্যাচ, ১১৫৭৯ রান, ২৭৩ উইকেট, ১৭ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ২ বার।
সানাথ জয়সুরিয়া: ৪৪৫ ম্যাচ, ১৩৪৩০ রান, ৩২৩ উইকেট, ২৮ শতক, এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ৪ বার।
সাহিদ আফ্রিদি: ৩৯৮ ম্যাচ, ৮০৬৪ রান, ৩৯৫ উইকেট, ৬ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ৯ বার।
শেন ওয়াটসন: ১৯০ ম্যাচ, ৫৭৫৭ রান, ১৬৮ উইকেট, ৯ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেটের নজির নেই।
ল্যান্স ক্লুজনার: ১৭১ ম্যাচ, ৩৫৭৬ রান, ১৯২ উইকেট, ২ শতক এবং এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার ৬ বার।